পিতার প্রতি সন্তানের হৃদয়ের আকুতি!
আব্বু, আমাকে আমার যৌবন অনুভব করতে দিন—তারুণ্যের পুষ্পিত দিনগুলো আমি উপভোগ করতে চাই।
আব্বু, চোখের সামনে উথাল-পাতাল করছে ফিতনার উত্তাল সমুদ্র। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার পূর্বেই আমার বিয়ের ব্যবস্থা করুন।
আব্বু, হয়তো আল্লাহ আপনাকে নেককার নাতি-নাতনি দান করবেন।
আব্বু, ফিতনা আমার একেবারেই সন্নিকটে—হাত বাড়ালেই আমি তার নাগাল পাই।
আব্বু, আমি আর ছোট নেই। আমি এখন পূর্ণ যুবক।
আব্বু, আমি আর সেই ছোট্ট খুকিটি নেই। আমি এখন পূর্ণ তরুণী—অধীর আগ্রহে যে পথ চেয়ে থাকে তার স্বপ্নের রাজকুমারের প্রতীক্ষায়।
আব্বু, হারামের চেয়ে হালাল উত্তম।
আব্বু, আপনি আমাকে অশ্লীল ও অশালীন কাজের শিকার হতে দেবেন না।
আব্বু, আমার দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করলে কিয়ামতের দিন আপনি আল্লাহর কাছে অনেক বড় প্রতিদান পাবেন।
আব্বু, খিদে পেলে মানুষ খাবার খায়। হালাল থেকে আমায় বঞ্চিত করবেন না।
.
এভাবে আবেগের সুরে বইটি সাজানো হয়েছে সেসব সন্তানদের জন্য, যারা বিয়ের কথা বাবাকে বলতে পারছেন না। এবং সেসব বাবাদের জন্য, যারা ভুলে গেছেন তাদের সন্তানদের বিয়ের বয়সের কথা। তাদের প্রতি উত্তম নসিহতপূর্ণ একটি বই ‘ইয়া আবি জাওয়্যীযনি।’
mahmud03 –
প্রেম-ভালোবাসার বিষয়টা কিশোর-কিশোরীদের কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার। কিন্তু বিকৃত হয়ে গেছে এর প্রকৃত পদ্ধতি। ‘বিবাহ বহির্ভূত প্রেম’ নামক এক সংক্রামক রোগ বর্তমানে মহামারী আকার ধারণ করেছে। প্রায় ঘরেই দেখা যায় কেউ না কেউ এই রোগে আক্রান্ত আছেই। বাড়িতে বাড়িতে আজ ভালোবাসার বাজনা, সকলের হাতে হাতে বাজছে প্রেমের বাঁশি। তাই তরুণ সমাজকে এই পাপ-পঙ্কিলতার হাত থেকে বাঁচিয়ে বিয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে এবং অভিভাবকদের নিকট সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে রচিত হয়েছে আরবের প্রখ্যাত আলেম ও বিশিষ্ট হাদীসবিশারদ, ‘শাইখ আব্দুল মালিক আল কাসিম’ এর ‘ইয়া আবি! জাওয়্যিজনি’ নামের পুস্তিকাটি। নিজ সন্তানদের এই রোগের হাত থেকে বাঁচাতে পিতা-মাতাকে বইটির দ্বারা ওষুধ প্রেসক্রাইব করে দিয়েছেন শাইখ আব্দুল মালিক আল কাসিম। এরই বাংলা অনুবাদ হচ্ছে রুহামা পাবলিকেশনের “বাবা! আমার বিয়ের ব্যবস্থা করুন” বইটি।
.
‖বিষয়বস্তু‖
বইটির মূল উপজীব্য হলো বিয়ের প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করিয়ে সন্তানের দ্রুত বিবাহ দেওয়ার জন্য পিতা-মাতার প্রতি আকুল আবেদন। বইটির প্রথমেই লেখক তুলে ধরেছেন এক উচ্চশিক্ষিত, সুন্দরী, অহংকারী নারীর তিক্ত অভিজ্ঞতার ঘটনা, যিনি উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান করতে করতেই রয়ে গিয়েছিলেন চিরকুমারী। আছে একজন তালাকপ্রাপ্তা নারীর কথা যিনি নিজ চরিত্র রক্ষার্থে এক সুদানি গোলামকেও বিয়ে করতে ইতস্তত বোধ করেন নি। এরপরে পর্যায়ক্রমে উঠে এসেছে বিবাহের গুরুত্ব ও এর মর্যাদা এবং বিবাহের উপকারিতা সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের আলোকে বিশদ আলোচনা। পাশাপাশি উল্লেখিত আছে মানুষের বিয়ের প্রতি অনীহা সৃষ্টির কারণসমূহ, বিয়েতে বিলম্ব হলে কি কি ক্ষতি হতে পারে আর তা সমাধানের উপায়ন্তর।
.
লেখক মেয়েদের জন্য পাত্র নির্বাচনের ব্যাপারেও উপদেশ দিয়েছেন। বিয়ের ব্যাপারে অভিভাবকদেরকে আরো সচেতন হওয়ার জন্য করেছেন হৃদয়গ্রাহী আলোচনা। এরপরেই লেখক বুঝিয়েছেন বিয়ের মাধ্যমে সন্তানেরা কিভাবে অধিক মার্জিত হয়, উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয় এবং তাদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও তা কিভাবে ভূমিকা রাখে। অবচেতনভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, সন্তানদের বিবাহের ব্যাপারে গাফেল হলে তাদের করা প্রত্যেকটি পাপের জন্য অভিভাবকদেরকেও আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।
.
এই বইটির সাথে সাথেই লেখকের ‘পুণ্যবতীর সন্ধানে’ নামক আরও একটি পুস্তিকা মলাটবদ্ধ করা হয়েছে। পুস্তিকাটি মূলত পাত্র-পাত্রী নির্বাচন প্রসঙ্গে। এতে ফুটে উঠেছে পুণ্যবতী নারীদের গুণাবলী এবং তাদের খুঁজে পাওয়ার দিকনির্দেশনা। উত্তম আদর্শের অধিকারিণী হওয়ার জন্য লেখক নারীদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু নসিহাহও করেছেন। আবার দ্বীনদার, পূণ্যবতী নারীকে বিয়ে করতে চাইলে, একজন পুরুষের নিজেকে কিভাবে গড়ে তোলা উচিত তাও বাতলে দিয়েছেন।
.
‖ভালোলাগা‖
বইটির অনুবাদ অত্যন্ত সাবলীল। প্রচ্ছদটাও নজরকাড়া। এছাড়াও কুরআন ও হাদীসের উদ্ধৃতি আলোচনাগুলোকে আরো গুরুত্ববহ করে তুলেছে। বইয়ের পাতায় পাতায় বর্তমান সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে। বইটি সন্তানদের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের না-বলা কথাগুলোকে বাবা-মায়ের কাছে পেশ করবে। ছলে-বলে-কৌশলে বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে বাকি কাজ বই নিজেই করে দিবে, ইন শা আল্লাহ। তাছাড়া বইয়ের নামকরণই এমনভাবে করা হয়েছে যে বাবা-মায়ের হাতে বই তুলে দিতে না পারলেও, দু’একদিন বই নিয়ে তাদের সামনে নাড়াচাড়া করলে বইয়ের নামই তাদের কাছে পৌঁছে দিবে মূল মেসেজ।