আরবি রস একটি মজার বই। আরবি সাহিত্যে কত অসাধারণ রস লুকিয়ে আছে—তার সাথে বাঙলাভাষী পাঠককে পরিচিত করার প্রয়াস। আরবি সাহিত্য শুধু নয়, আরবি ভাষাটাও খুবই মজার। এই মজাটা আয়ত্তে আনার কিছু কলকব্জা এই বইয়ের গল্প থেকে পাওয়া যাবে।
‘আরবি রস’ সবার জন্যে। এই রস আস্বাদনের জন্যে আরবি ভাষা জানা কিংবা আরবি ভাষার শিক্ষার্থী হওয়া আবশ্যক নয়। আরবি রস-এর হাঁড়ি সবার জন্যে উন্মুক্ত। এ কথাও স্মর্তব্য, সবার উপযোগী করে রচিত হলেও এটি কোনো চটুল কৌতুকগ্রন্থ নয়। ভাষা-সাহিত্যের বিচিত্র-বর্ণাঢ্য স্বাদ উপভোগে অভ্যস্ত বা আগ্রহী পাঠকবৃন্দ ‘আরবি রস’-এর সাথে বেশ সুন্দর সময় কাটাতে সক্ষম হবেন।
Meher Afroz –
বইঃ আরবি রস
লেখকঃ আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব।
পৃথিবীতে বিভিন্ন ভাষার মধ্যে সবচাইতে উন্নত ভাষা হলো আল্লাহর ভাষা- ‘আরবি ভাষা’। তাছাড়া এ ভাষা উচ্চারণ ও ব্যবহারের দিক দিয়ে অন্যান্য ভাষাগুলোর মধ্যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য বহণ করে।যেমন- আরবি হরফ উচ্চারণের উৎপত্তিস্থল দুই ঠোঁট থেকে কণ্ঠনালির শেষ ভাগ পর্যন্ত। এছাড়া বিশ্বে অনেক অক্ষরবিশিষ্ট ভাষা আছে যেগুলোর উচ্চারণের উৎপত্তিস্থল মুখের সংকীর্ণ জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
এছাড়া আরবি বর্ণ উচ্চারণের উৎপত্তিস্থল ১৪০০ বছর ধরে আজও অবিচল আছে, যা অন্য কোনো ভাষায় দেখা যায় না। শব্দাবলি ও সমার্থবোধক শব্দাবলির দিক থেকেও আরবি অভিধান সবচেয়ে সমৃদ্ধ।
প্রাক-ইসলামী আরব কবিরা যে আরবি ভাষা ব্যবহার করতেন, তা ছিল অতি উৎকৃষ্ট মানের। তাদের লেখা কবিতা মূলত মুখে মুখেই প্রচারিত ও সংরক্ষিত হত। তাছাড়াও এ ভাষাতে সহজেই বিজ্ঞান ও শিল্পের প্রয়োজনে নতুন নতুন শব্দ ও পরিভাষা তৈরি করা যেত এবং আজও তা করা যায়।
এই সেই আরবি ভাষা; এ ভাষা যেমন সহজ সরল সাবলিল তেমন অনেক মজারও। ভাষাগত এ মজা উপভোগ করতে সমকালীন প্রকাশন পাঠকের হাতে তুলে দিয়েছেন ‘ আরবি রস ’ বইটি।বর্তমানে বইটি বাংলা ভাষাভাষী প্রতিটি পাঠকের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। এ বইটিতে শুধু ভাষা ব্যবহারের সুন্দরর্যই ফুটে উঠেনি পাশাপাশি ফুটে উঠেছে আরব্য সমাজের অতিত ইতিহাস ও লোকসমাজের মেধা আর অসামান্য বুদ্ধিদীপ্ততা। আশা করি প্রতিটি পাঠকই বইটি পড়ে অনেক বেশি উপকৃত হবেন।
বই থেকে কিছু অংশঃ—
‘গর্ভনরকে আমার কথাটা পৌছাতে কেউ পারবে নাকি?
অসুস্থ নই, শুধু সাথীহীন বলে রাতভর জেগেই থাকি
এই রাতজাগা থেকে উদ্ধার করুন আমাকে খুব তাড়াতাড়ি
অন্যথায় ভয় হয়, আপনার অবাধ্যতায় পড়ে যেতে পারি।
চোখের নীলচে দাগ নিয়ে যদি গোনাহে কখনো জড়াই পরে,
ছেলেকে হয়ত বন্দী দেখতে পাবেন চাবুক মারার ঘরে।’
পৃষ্ঠ নংঃ— ৪৭
ইমাম ইবনুল জাওযি (র.) সমসাময়িক মিশরের আরেকজন আমিরের গল্প। যিনি কবুতর খেলা খুব পছন্দ করতেন। একদিন আমির তাঁর আর তাঁর খাদেমের কবুতরের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। আমির কোনো কারণে সেই প্রতিযোগীতায় উপস্থিত হতে পারেননি।তাঁর উজির খেলা প্রতিনিধিত্ব করেন।এক পর্যায়ে খাদেমের কবুতর বিজয়ী হয়ে যায়। আমির খেলার অবস্থা জানতে চাইলে উজির পরে যায় ফেসাদে।কারণচ আমির যদি শোনেন তার কবুতর হেরে গেছে তাহলে রাগের মাথায় তাকে শাস্তিও দিতে পারে। আবার মিথ্যা বললেও শাস্তি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে উজির আমিরকে চিঠি লিখেন-
“ আপনার এমন রাজকপাল যে
কারও সাথে কভু যাননি হেরে
আজকের এই খেলায়ও পাখি
আপনার সাথে ওঠেনি পেরে।
আজ আপনার পাখি বিজয়ী হয়েছে,
প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে দিলো
তবে তার খেদমতে প্রহরী হিসেবে
আরেকটি পাখি সামনে ছিলো।”
পৃষ্ঠা নং—১৩-১৪.
পাঠ্য অনুভূতিঃ—
যখন টুইটারে নিয়মিত (লেখক) শিহাব আহমেদ তুহিন ভাইয়ার টুইটগুলো পড়তাম, সেখানে ভাইয়া এমন আরবি / উর্দু ভাষার কাব্যগুলো লিখে কমেন্টে অনুবাদ গুলো লিখে রাখতেন। সেসব পড়তাম আর চমকিত হতাম। কিন্তু সব সময় এক নাগাড়ে পড়া হয়ে উঠত না, মনে মনে খোঁজ করতাম এমন একটা বই। যেখানে আরবি কাব্যগুলো বাংলায় অনুবাদ থাকবে। আলহামদুলিল্লাহ! সমকালীন প্রকাশন ‘আরবি রস’ বইটি প্রকাশ করেছেন। প্রকাশনের প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
জ্বাযাকুমুল্লাহু খয়ইরুন।
মন্তব্যঃ—
বইয়ের প্রতিটা টপিকের বর্ননা ভঙ্গি এতো সংক্ষিপ্ত ছিলো যে এক থেকে দুই পৃষ্ঠার বেশি ‘এক- একটা টপিক ছাপা হয়নি। তাছাড়া প্রতিটি টপিক এতো অর্থবহ ছিলো যা সত্যিই আমাকে চমকিত করেছে।
সম্পাদনা খুবই ভালো ছিলো।প্রচ্ছদে নান্দনিকতা ফুটে উঠেছে। পৃষ্ঠার মানসহ সবই মনের মত ছিলো।
রিভিউ দাতাঃ Meher Afroz