আমার দেখা তুরস্ক (হার্ডকভার)

||বুক রিভিউ||

▪︎ উসমানী সালতানাতের ভূমি তুরস্ক, আধ্যাত্মিকতার ভূমি তুরষ্ক। একসময় সাধারণ জ্ঞানে প্রশ্ন থাকতো,ইউরোপের রুগ্ন দেশ কোনটি..??জবাব আসতো তুরষ্ক।কিন্তু উসমানী খিলাফতের স্মৃতিবিজড়িত এই তুরষ্ক একুশ শতকে এসে আবারো নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ইউরোপের বুকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার তুর্কী স্টাইল নিয়ে সবাই কৌতুহলী..!! তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের এশিয়ার এই দক্ষিণ পাশটায় তার সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেক বেড়েছে। একসময় এই এশিয়ার লোকেরাও উসমানী খিলাফাহর সৈন্যদের সাথে বলকান যুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলো। খিলাফত রক্ষার চেষ্টায় এদের প্রচেষ্টা কারোরই অজানা নয়। সেই উসমানী সালতানাতের উত্তরসূরী আজকের এই আদতে কেমন..? ঠিক কি কারণে তুরস্ক এখন বিশ্ববাসীর ফোকাসে..? কেন তুরস্ক নিজেদের দিনদিন উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে..?? কেন গোটা বিশ্বের নিপীড়িত চোখ তুরস্কের দিকে..?? বসফরাসের তীরে আজ নতুন ঢেউ উঠছে কেনো..?? পরিবর্তিত তুরস্ক আমাদের জন্য কতটুকই-বা শিক্ষার..?? এসংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তুরস্ক প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ গবেষক হাফিজুর রহমান তার লেখা দ্বিতীয় মৌলিক গ্রন্থ “আমার দেখা তুরস্ক : বিশ্বব্যবস্থার নতুন শক্তি তুর্কি জাতির ভেতর-বাহির নামক” গ্রন্থে।

▪︎ বইটিতে তুরস্কের মানুষ,ইতিহাস,সমাজ,রাজনীতি,ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও তুরষ্কের এককালীন খিলাফতে উসমানীয়ার আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব এবং তাদের প্রভাবও বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। আলোচনার সুবিধার্থে বইটিকে মোট ৫ টি পর্বে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে।

• প্রথম পর্বে লেখক যখন তুরস্কে যান তখন বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৫০০০ কিলোমিটার দূরের সেই তুরষ্কে একজন বিদেশি ছাত্র হিসেবে তার প্রথম দিককার সময়গুলো কীভাবে অতিবাহিত হয়েছে তা আলোকপাত করার পাশাপাশি তুরস্ক ও তুর্কী জাতির ইতিহাস সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হয়েছে।

• দ্বিতীয় পর্বে তুরষ্কের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো যেমন-ইস্তাম্বুল,ইজমির,কোনিয়া,বুরসা ও দিয়ারবাকেরসহ বেশ কিছু শহরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভ্রমণকাহিনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। যেখানে উঠে এসেছে আয়া সোফিয়া, তোপকাপি প্রাসাদ, দোলমাবাহচে প্রাসাদ সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বর্তমান চিত্র এবং ইতিহাস। এছাড়াও উঠে এসেছে কিছু বিখ্যাত মানুষের জীবনের টুকরো টুকরো অংশ। মেভলানা জালালুদ্দিন রুমি, মিমার সিনানের মতো মানুষদের কিছু গল্প করা হয়েছে বইটিতে।

• তৃতীয় পর্বে মূলত আলোচনা করা হয়েছে তুরস্কের কিছু মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে। এখানে তুর্কী রাষ্ট্রের উত্থান,তুরষ্কের শিক্ষাব্যবস্থা,স্বাস্থ্যখাত,যাতায়াতব্যবস্থা,জনজীবন,বিয়ে ও পারিবারিক জীবন,জননিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে এই পর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

• চতুর্থ পর্বে মূলত তুরস্কের নানান সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে তুরষ্কের খাবার-দাবার নিয়ে যেমন এসেছে তেমনি এসেছে ঈদ,ইবাদত,বাড়ি-ঘর, গ্রামীণ জীবন,এলাকাপ্রীতি ইত্যাদি বিষয়। বাদ যায়নি যুবকদের জীবনযাপনের রীতিনীতি এবং যুবকরা কীভাবে গঠিত হচ্ছে সে বিষয় নিয়েও। রাজনীতি,সমাজব্যবস্থায় তরুণরা কতখানি ভূমিকা রাখছে তা বইটির এই অধ্যায়ে ভালো করেই আলোচনা করা হয়েছে।

• শেষ পর্ব অর্থাৎ পঞ্চম পর্বে এসে বর্ণনা করা হয়েছে রাজনীতি ও সমসাময়িক তুরস্ক নিয়ে।তাতে কামাল আতাতুর্ক, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ,ইসলামী রাজনীতি,একে পার্টি এবং প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের নানা দিক নিয়ে কোথাও সংক্ষিপ্ত আবার কোনো কোনো জায়গায় বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে।খাসোগি হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে সমসাময়িক তুরস্কের কথা লিখে শেষ করা “তুরস্ক কি থেমে যাবে?” এই শিরোনামে।একদম শেষ পাতায় তুরস্কে বিদেশী ছাত্রদের বিশেষ করে বাংলাদেশী ছাত্রদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে একটি পরিশিষ্ট যোগ করা হয়েছে।

▪︎ বইটি কারা পড়বেন এবং কেন পড়বেন…??? যারা তুরস্ক ও সমসাময়িক রাজনীতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য বইটি অত্যন্ত উপকারী।তারা বইটি তুরষ্কের ব্যাপারে জানার জন্য পড়তে পারেন। তাছাড়া যারা ইতিহাস পছন্দ করেন তাদের জন্য বইটি অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে থাকি।

▪︎ ব্যক্তিগত অনুভূতি : বইটি নিয়ে বসেছি সকাল ১০.০০ টায়, উঠেছি রাত ১.১৫ মিনিটে। মাঝখানে নামাজ,খাওয়া-দাওয়া ও আনুসাঙ্গিক বিষয় বাদে বই নিয়েই পড়েছিলাম। কতটা ইন্টারেস্টিং বই হলে একটানা পড়া যায়। একদম অনুভূতির তরঙ্গে গিয়ে নাড়া দেয়ার মতো বই একটা। তুরস্ক নিয়ে মাস্টারপিস একটি বই…

▪︎ ব্যক্তিগত রেটিং : ৫/৫

মাআসসালাম………..!!!