ইমাম বুখারী (রহঃ) সংকলিত সহীহ আল বুখারীর পর তার যে কিতাবটি মুসলিম সমাজে সর্বাধিক পরিচিত তা হচ্ছে ‘ আল আদাবুল মুফরাদ’।এটি মূলত শিষ্টাচার সংক্রান্ত হাদিসের সংকলন। ইসলামি সমাজে মু’আমিলা তথা পারস্পরিক সম্পর্কের উপর অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যারা ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত তাদের শিষ্টাচারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাদের ব্যবহার, আচার-আচরণ, নৈতিকতা ইত্যাদি দেখেই মানুষ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে। যে নসিহত প্রদান করা হয় এবং সে অনুযায়ী তা অর্জনের শিক্ষা দেওয়া হয়। তাছাড়া মানব সম্প্রদায়কে অন্যান্য প্রাণী জগত থেকে স্বতন্ত্র করার পেছনে যে কয়টি কারণ কার্যকর রয়েছে তার মধ্যে শিষ্টাচার অন্যতম। তাই মানব সভ্যতার বিকাশেও শিষ্টচারের ভূমিকা অনন্য। এ দিক থেকেএ গ্রন্থের ভূমিকা অসাধারণ। এতে ১৩৩৯ খানা হাদিস ৬৪৫টি শিরোনামে বর্ণনা কড়া হয়েছে । আদাব ও নৈতিকতা সংক্রান্ত হাদিসের এতো বড় সমাহার আর দ্বিতীয়টি নেই।
Copyright © 2024 Seanpublication.com
Farzana Ashrafi –
‘সহীহ আল-বুখারী’-র সংকলক হিসেবে আমরা সবাই ইমাম বুখারী রহ.- কে চিনি। বর্তমান উজবেকিস্থানের বুখারায় জন্ম নেয়া ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ এই হাদীসবেত্তার আরেকটি অনন্য কীর্তি ‘আল-আদাবুল মুফরাদ’।
‘আল-আদাবুল মুফরাদ’ বা ‘অনন্য শিষ্টাচার’ মূলত রাসূল সা.- এর শিষ্টাচার এবং পারস্পারিক আচার-ব্যবহার সম্পর্কিত হাদীসের সংকলন। মুসলিমদের উন্নত নৈতিক চরিত্র এবং শিষ্টাচার পূর্ণ ব্যক্তিত্ব গঠনের নিমিত্তে ইমাম বুখারী রহ. তাঁর এই গ্রন্থে ১৩৩৯ টি হাদীস সংকলন করেছেন।
একজন মুসলিমের আমল-ইবাদাত, ঘুম-খাওয়া থেকে শুরু করে তার দৈনন্দিন বিভিন্ন কার্যাবলী, পিতা-মাতা, আত্মীয়-প্রতিবেশীর সাথে আচরনের নমুনা সহ সমস্ত ব্যক্তিগত, সামাজিক জীবনে পালনীয় শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদীসগুলো ‘আদাবুল মুফরাদ’- এ মলাটবদ্ধ হয়েছে।
বাংলাতে কয়েকটি প্রকাশনীর অনুবাদ পাওয়া যায়। ‘আহসান পাবলিকেশন’ থেকে প্রকাশিত, মাওলানা মুহাম্মাদ মূসা-র অনূদিত ‘আল-আদাবুল মুফরাদ’ পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রাঞ্জল অনুবাদ, উন্নত কাগজের সুন্দর বাঁধাই। প্রচ্ছদও বেশ চমৎকার।
‘আল-আদাবুল মুফরাদ’ পাঠের অনূভুতি সত্যিই অসাধারণ। নিজের দুর্বল ঈমাণ আর ইগোর উর্ধ্বে উঠতে না পেরে উত্তম আখলাকের ব্যাপারে আমি নিতান্তই একজন ‘মিসকিন’। এক ভাইয়ের লেখায় পড়ে বইটি কিনেছিলাম।
আলহামদুলিল্লাহ! সংকলনটি যে কত উপকারী! আল্লাহ ভাইটিকে উত্তম বিনিময় দিন। ব্যক্তিগত চরিত্র উন্নয়নের জন্য এর থেকে ভালো সহায়িকা আর হয় না।
উন্নত নৈতিক চরিত্র গঠন, দ্বায়িত্ববোধের উন্মেষ ঘটানো, পারস্পারিক সুসম্পর্ক তৈরি, মানবিক গুনাবলীর বিকাশ সাধনের জন্য কি করতে হবে, কিভাবে করতে সব কিছুই আল্লাহর রাসূল শিখিয়েছেন। আজকে আমরা পশ্চিমাদের থেকে ‘ম্যানার্স & এটিকেট’ শিখি। মজার ব্যাপার হচ্ছে এর থেকেও উন্নত আচার- ব্যাবহার-শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন আমাদের নবি (স.)। আর সেসবই আমাদের জন্য একত্রিত করেছেন ইমাম বুখারী (রহ.)। প্রতিনিয়তই ‘আল-আদাবুল মুফরাদ’ আমাকে শিষ্টাচারী হওয়ার রসদ যুগিয়ে যাচ্ছে।
ইসলামে সুন্দর আখলাককে ভীষণভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শেষ বিচারের দিন ‘তাকওয়া এবং উত্তম আখলাক’ মুমিনের নেকির পাল্লাকে ভারি করবে। তাই আখলাককে সুন্দর করার প্রচেষ্টা চালানো প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য। আর এ ক্ষেত্রে আদর্শ হিসেবে ‘রহমাতুল্লিল আলামীন’-র থেকে উত্তম আর কে ই বা আছে? নববী শিক্ষার আলোকে নিজের চরিত্রকে গড়ে নিতে হলে হাতের কাছে রাখতে হবে ‘আল-আদাবুল মুফরাদ’। এটি প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অবশ্যপাঠ্য।