আমাদের প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে জানতে পারলেন আফিয়াকে… আফিয়াকে… ওহ কীভাবে বলব আমি, আফিয়াকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে পাঁচ পাঁচজন পুরুষ আমার ছোট বোনটার দেহে তল্লাশি চালিয়েছে। তারপর ওরা কুরআন শরিফের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলেছে। আর আফিয়াকে বলেছে এর ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে। কীভাবে ও পারবে কুরআনের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে! হ্যাঁ! কী করে সম্ভব? ওরা আফিয়াকে এভাবে হাঁটার জন্য বাধ্য করত। কাপড় পরতে দিত না। নগ্ন করে রাখত। যতক্ষণ না হাঁটবে কুরআনের পৃষ্ঠার উপর দিয়ে, ততক্ষণ কাপড় দেবে না। আফিয়া আমাদের ভাইয়ার সাথে দেখা করতে চাইলেও ওরা এই কাজ করত। আইনজীবীর সাথে কথা বলতে চাইলেও একই ঘটনা। ওরা এসব করে করে রিপোর্ট করত আফিয়া ওদের কাজে সহযোগিতা করছে না!
ছিয়াশি বছরের কারাদণ্ড পাওয়া আফিয়ার সাথে এই ছিল তাদের ব্যবহার। তার নিজের ভাই কোর্টে উপস্থিত ছিল; কিন্তু দেখা করার অনুমতি পায়নি। তারা ওর মাথা থেকে স্কার্ফ টান দিয়ে খুলে ফেলে। এরপর একে টুকরো টুকরো করে ছেঁড়ে। তারা ওর কাছ থেকে কুরআন ছিনিয়ে নেয়। সেই কুরআন যা ওকে সান্ত্বনা দিত, সাহস যোগাত। আফিয়া আদালতকে জানিয়েছে ওর কোল থেকে নবজাতক সন্তানকে ছিনিয়ে নেওয়াকেই তার কাছে মৃত্যুসম মনে হয়েছিল। কিন্তু কুরআন কেড়ে নেওয়ার তুলনায় সন্তান হারানোর সেই অনুভূতি তার কাছে কিছুই না।
Muhammad Tamimul Ihsan –
||বুক রিভিউ||
▪︎ ড.আফিয়া সিদ্দিকী একজন উচ্চশিক্ষিত মুসলিম নারী,গবেষক,ধর্মতত্ত্ববিদ,হাফেজা এবং সমাজকর্মী। জন্মেছেন পাকিস্তানের করাচি শহরে।বাবা ব্রিটিশ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত একজন নিউরো সার্জন। পাকিস্তানে পড়াশোনা করলেও পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে আসেন আমেরিকায়। আমেরিকার এমআইটি এবং ব্রান্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার চান্স পান। প্রফেসর নোয়াম চমস্কি যার সম্পর্কে বলেছিলেন,”আফিয়া যেখানেই যায় তার আশেপাশের পরিবেশ সে পাল্টে দেয়।বাস্তবেও আফিয়া ছিলেন এমনই। মানুষের সেবার বাহিরে তিনি কিছুই কল্পনা করতে পারতেন না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে চলা আমেরিকার রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার এই মুসলিম নারী। বইটিতে তার অামেরিকা কর্তৃক অপহরণ, মিথ্যা মামলা,দুর্নীতিগ্রস্থ আমেরিকান বিচারব্যবস্থা সহ আরো অনেক কিছু আলোচনা করা হয়েছে।
▪︎ বইটিকে ভাগ করা হয়েছে মোট ১৯ টি অধ্যায়ে। যেখানে বহুল আলোচিত আফিয়া সিদ্দিকী কে, কী তার পরিচয় তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এরপরেই ড.আফিয়া সিদ্দিকী সম্পর্কে রয়েছে তার মা এবং বোন ড.ফাওজিয়া সিদ্দিকীর সাক্ষাৎকার।আর এরপরেই শুরু মূল কাহিনী। অপহরণ, আফিয়া সিদ্দিকীর কি অপরাধ ছিল,তার জীবনের বিভিন্নদিক,এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কার্সওয়াল জেলের স্মৃতি আর রয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রখ্যাত ব্যক্তিদের আলোচনা। এছাড়াও অাফিয়ার বিরুদ্ধে প্রহসন মূলক বিচারব্যবস্থা, ওবামার কাছে আফিয়া সিদ্দীকির মায়ের কান্না যুক্ত চিঠি এবং মার্কিন সরকারের প্রতি আফিয়া সিদ্দিকীর পরিবারের খোলা চিঠি। মোটকথা আফিয়া সিদ্দিকীর মতো একজন নিরপরাধ মানুষের উপর সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার জুলুমের চিত্র ভালোভাবে ফুটে উঠেছে।
▪︎ বইটি কারা পড়বেন এবং কেন পড়বেন…???
যেসব মস্তিষ্ক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আমেরিকার ছোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে তাদের জন্য অনেক জরুরী একটি বই। যারা আমেরিকার বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রসংসা করে থাকে তাদের জন্য এই বইটি।একজন ঘুমন্ত মুসলিমের বিবেক জাগ্রত করার জন্য এরকম একটি বইই যথেষ্ট। আর বইটি এ কারণেই পড়বেন যেন নিজের ভিতরে ‘আমি মুসলিম’ চেতনাটা যেন আবারর জেগে উঠে।
▪︎ ব্যক্তিগত অনুভূতি : বইটি পড়ে ভাষায় বুঝাতে পারবো না কি পরিমাণ কেঁদেছি। রাত ১১.০০ টার সময় বই হাতে রাত ১.০০ টা পর্যন্ত পড়েও বইটির অর্ধেক পর্যন্ত যেতে পারিনি কান্নার তোড়ে।টপটপ করে পানি পড়েছে বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোতে। একজন মুসলিম বোন জালিমের হাতে ধর্ষিত হচ্ছে চোখে ভাসলেই টপ টপ করে পানি পড়ছে।মাঝে মাঝে মুহাম্মদ বিন কাসিম এবং মুতাসিম বিল্লাহর কথা মনে হয় কোথায় তারা..?? মুসলিম নারীর সম্ভ্রম হানি হচ্ছে আর আমরা ঘুমিয়ে আছি মহাতোড়ে।
তাই নিজের ঘুমন্ত বিবেকটা জাগ্রত করার জন্য হলেও বইটি পড়া দরকার অন্তত ইয়াং জেনারেশনের প্রত্যেকটি যুবককে। যাতে নিজের ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করা যায়।
▪︎ ব্যক্তিগত রেটিং : ৫/৫
মাআসসালাম…………!!