সাহাবায়ে কেরামের সময় থেকেই নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হয় এবং এমন শরয়ী মাসাইলের প্রয়োজন দেখা দেয়, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে প্রয়োজন পড়েনি। এভাবে শরয়ী মাসাইলের পরিধি বাড়তে লাগল এবং মানুষ নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হলো। আর আল্লাহ তাআলা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী কুরআন-হাদীসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে দক্ষ এমন কিছু জ্ঞানবান বান্দার আবির্ভাব ঘটালেন, যাঁরা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে ঐসব সমস্যার সমাধানে সক্ষম ও পারদর্শী ছিলেন। যাঁরা মুজতাহিদ ও ফকীহ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাদের একজন ইমাম আবু হানিফা।
.
পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর অন্যান্য ভাষায় ফাতাওয়া প্রদান ও কিতাব রচনা আরম্ভ হয়। আধুনিককালে প্রায় সকল ভাষাতেই ফিক্হের কিতাবাদি রচিত ও অনূদিত হয়েছে। বিশেষতঃ আধুনিক সমস্যার সমাধান দিতে আরবীর পাশাপাশি উর্দু এবং ফারসি ভাষায়ও বহু ফাতাওয়াগ্রন্থ প্রণীত হয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য বাংলায় শরয়ী মাসায়েলের বৃহৎ আকারে কোনো গ্রন্থ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ, দেরিতে হলেও সবুজপত্র পাবলিকেশন এই দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়েছে। আলোচ্য গ্রন্থটি এ বিষয়েই গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
.
এ কিতাব রচনা ও সংকলনের ক্ষেত্রে ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীর বর্ণনা ও বিন্যাস পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। কারণ, প্রচলিত ফাতাওয়া গ্রন্থের মধ্যে এই গ্রন্থখানির বর্ণনা ও বিন্যাস পদ্ধতি খুবই আকর্ষণীয়। তবে এর বিন্যাস পদ্ধতির হুবহু অনুসরণ করা হয়নি; বরং অনেক নতুন কিছু সংযোজন করা হয়েছে এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়াবলি বাদ দেয়া হয়েছে। যেহেতু, এ গ্রন্থে ফাতাওয়ার বহু কিতাব থেকে মাসআলা চয়ন করা হয়েছে তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘মাসাইল ও ফাতাওয়া সমগ্র’। এতে প্রতিটি মাসআলা লিখার পর তা যে কিতাব থেকে সংকলন করা হয়েছে তার নাম, খণ্ড ও পৃষ্ঠা-নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে করে পাঠক সহজেই মাসআলার উৎস সম্পর্কে জানতে পারেন। এ কিতাবখানি সাধারণ লোকদের জন্য লেখা, যারা ফিকহ বিষয়ে পরিজ্ঞাত নন।
.
মূল কিতাব রচনার পূর্বে লেখক হানাফী ফিকহ ও ইমাম আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে কতিপয় বিষয় আলোচনা করেছেন। এসব বিষয় ফিকহী মাসাইল বুঝতে সহায়ক হবে। প্রত্যেক অধ্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচ্ছেদ তৈরি করে বিষয়গুলো স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে ঐ অধ্যায় সংক্রান্ত বিবিধ মাসাইলের জন্য আলাদা পরিচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে, যাতে এ সংক্রান্ত মাসআলা খুঁজে নিতে সহজ হয়। অধ্যায়গুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট আধুনিক জীবনে উদ্ভূত মাসাইলসমূহ সংযোজনের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ভবিষ্যতে নতুন কোনো মাসআলার উদ্ভব হলে তা পরবর্তী সংস্করণে সংযোজন করে দেয়ার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা হবে, ইনশাআল্লাহ।
প্রকাশক যথাসম্ভব চেষ্টা করেছে, এ বইয়ে যেন বর্তমান সময় পর্যন্ত উদ্ভূত সকল মাসআলার সমাধান সন্নিবেশিত হয়। প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইয়ের পর এ কিতাবে তাহারাত ও সালাত সম্পর্কিত চার হাজারের অধিক মাসাইল সংকলিত হয়েছে। গ্রন্থের শেষ দিকে পরিশিষ্টে নির্বাচিত কিছু মাসায়েল নির্দেশিকা দেয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠায় তাতে আন্ডার লাইন দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
Reviews
There are no reviews yet.