বই

বইপাঠ

শ্য-১. সময় : দুই হাজার চৌদ্দ সাল।

স্থান : বান্দরবান শহর।

প্রবারণার মৌসুম তখন। সন্ধ্যার পর আকাশজুড়ে ফানুশ উড়ছে। আমরা পাহাড় থেকে নেমে এলাম চা খেতে আর শহরে ঘুরতে। রাস্তার পাশে ধূলোর মাদুরে বসা একজন পান-দোকানিকে দেখে চমকে উঠলাম। গাড়ির পেঁপোঁ আর মানুষের অবিশ্রান্ত হৈ-হল্লার শব্দযন্ত্রণা চাপিয়ে তিনি গভীর মনোযোগে একটা মোটা-সোটা বই পড়ছেন। সাধারণত দোকান-পাটে পত্রিকা পড়তে দেখা যায়। কিন্তু রাস্তার পাশে বসে পান-বিক্রি করা পৌঢ় ব্যক্তিটির মনোযোগী পাঠ দেখে আমি গভীর মুগ্ধতায় অনেকক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

দৃশ্য-২. সময় : গত জানুয়ারি।

স্থান : ধোঁয়া-ধূলোতে ঢাকা শহর।

আমাদের অফিসের এসি নতুনভাবে ফিটিং করা হচ্ছে। কিছু জিনিশপাতি দরকার। মিস্ত্রীর সঙ্গে আমিও গেলাম। এসির যন্ত্রপাতির দোকান। চারদিক ঠাসা যন্ত্রপাতিতে। সড়কের পাশে দোকান। হুস করে চলে যাচ্ছে গাড়ি, উড়িয়ে দিয়ে ধূলো, বাজিয়ে দিয়ে ভেঁপো। এরই মধ্যে ক্যাশবক্সে মাথাগুঁজে হ্যাংলা-পাতলা দোকানি ছেলেটি গভীর মনোযোগে বই পড়ছে। পরনে তার ময়লা শার্ট, মাথার চুল অবিন্যস্ত। শরীরের অবস্থা দশাসই। এই রকম ছেলেদের বসে বসে ফোনে ভিডিও দেখাই নিয়ম। দোকানি ছেলেটির বই পড়ার মনোযোগ দেখে সত্যি সত্যি আমি আপ্লুত হলাম। হরহামেশা এই রকম অনেক দৃশ্যই চোখে পড়ে। অনেকে ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করে। আমরা সেগুলো দেখে লাভ রিএক্ট দিই, বাহ বাহ দিই। ছবিটির আবেদন আমাদের কাছে সেখানেই শেষ হয়ে যায়। আমি কোনো ছবি তুলি না, বুকের ভেতর গভীর যত্নে ধারণ করে রাখি দৃশ্যগুলো। যখন আরামে আলসে সময় কাটিয়ে দিই, এগুলো মনে করে লজ্জিত হবার চেষ্টা করি।

[দুই] (এই অংশে প্রাসঙ্গিক হওয়ায় আমাদের পুরোনো একটি লেখা এড করছি) ছুটির দিনে খুব সকালে পার্কে যখন হাঁটতে যাবেন অথবা প্রিয় কাউকে সাথে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে যাবেন, তখন সুযোগ পেলে সঙ্গে একটি বই রেখে দিন। কাজে দেবে।

.

পার্কের বেঞ্চে বসে বই পড়তে লজ্জার তো কিছু নেই। সময়টা বেশ ভালোই কাটবে। মগজটা আরও শানিত হবে, মনটা অনেক সতেজ রবে। সাথে যদি ফোন রাখা যায়, ইয়া বড় ট্যাব রাখা যায়, তবে বই রাখতে সমস্যা কোথায়?

.

মেট্রোরেলের কাজ চলছে। মহাসড়কের বেহাল দশা! দশ মিনিটের পথ পেরোতে এখন সময় লাগে একটি ঘণ্টা। তাই বলে কি সময়টাকে এমনি করে দেব যেতে? জ্যামে বসে ফেবুর ভেতর বুঁদ হয়ে নয়, বরং বই খুলে তো পড়তে পারি খানিক সময়। আর রাতের বেলায় ঘুমোতে গেলে মাথার পাশে ফোন রাখা নয়, চোখ বোলাব বইয়ের পাতায়।

.

আমাদের ছোট ভাইবোন কিংবা আদরের সোনামণিরা আমাদের দেখেই শিখবে। আমরা বই পড়লে তাদের ভেতরও বই পড়ার স্পৃহা জেগে উঠবে। কিছুদিন পর তারা নিজে থেকেই ফোন রেখে হাতে বই তুলে নেবে।

.

আমরা সমাজটিকে বদলে দিতে চাই। ফোনের আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চাই। আসুন, আজ থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি। সময়ের সদ্ব্যবহার করলে সমাজটা এমনিতেই বদলাতে শুরু করবে।

.

সিয়ান পাবলিকেশন বিশুদ্ধ জ্ঞান || বিশ্বমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *