চিন্তালাপ, বই

আপনার সন্তান আমার সিঁড়িঘরে কী করে? — আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক

আমাদের অফিস চারতলা থেকে পাঁচ তলায় এক্সটেনশন করেছে গত মাসে। পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। তবু আমার ডিপার্টমেন্ট নিয়ে আমি উপরে চলে গেছি। আমি সেদিন যোহরের সালাহ আদায় করতে নিচে নামবো। বের হতে গিয়ে যেই না দরজাটা ভেতর থেকে টান দিয়ে খুলেছি; একটি মেয়ে ও একটি ছেলে আচমকা প্রায় ফ্ল্যাটের মধ্যে পড়ে যেতে গেলো। তারা দু’জনই বাইরে থেকে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়েছিল। আমি তো অবাক! এক জোড়াই নয়, তার সাথে সেখানে আরো দু’জোড়া টিনেজার ছিলো সেখানে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম যে, তারা উপরে একটি ইংলিশ মিডিয়াম কোচিং সেন্টারে এসেছে পড়ার জন্য।

* * *

মাস ছ’য়েক আগের কথা। আমি আমার মেয়ের পড়ার জন্য একজন মহিলা হোম টিউটর খুঁজছিলাম। আমার বাসার কাছেই একটা কোচিং সেন্টার আছে। ভাবলাম, সেখানে গেলে হয়তো পাওয়া যাবে। তো মাগরিবের সালাহ আদায়ের জন্য একটু টাইম হাতে নিয়ে নামলাম; যেন আগে সেখানে গিয়ে এসে জামা’আত ধরতে পারি। দো’তলার সেই কোচিং সেন্টারে উঠে তো আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম। ক্লাসরুমে টিচারদের কাউকে দেখলাম না। তারা তাদের রুমে। দেখলাম সন্ধ্যার আলো-আধারিতে প্রায় প্রতিটি রুমেই দু’ তিনটি জোড়া ঘনিষ্ট হয়ে বসে ‘কোচিং’ করছে। এমন ‘আদর্শ’ স্থান থেকে মেয়ের জন্য টিচার নেওয়ার কথা ভাবতেই আমার গা ঘিনঘিন করে উঠলো। চলে এলাম তখনই। একটু ধৈর্য ধরতে হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমার মেয়ের জন্য পর্দানশীন একজন ভালো টিচার মিলিয়ে দিয়েছেন।

* * *

আমার বাসার এলাকাতেই একটি বেশ ভালো কোচিং সেন্টার ছিলো। নাম প্রতিশ্রুতি কোচিং। আমার পরিচিত ক’জন আদর্শবান তরুন মিলে এটি আরম্ভ করেছিলো। ইন্টারমিডিয়েট কোচিং এখান থেকে করে মেডিক্যাল, বুয়েট, ঢাবি সহ প্রথম সারির অনেক প্রতিষ্ঠানে চান্সও পেয়েছে অনেকে। আমাকে তারা মাঝেমধ্যে দাওয়াত করতো ছাত্রদের চরিত্র গঠন বিষয়ে কিছু বলার জন্য। বছর তিনেক পর শুনলাম, আমার সেই পরিচিত তরুণরা গরুর ফার্ম করার উদ্যেগ নিয়েছে। হালাল উপার্জনের জন্য। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন কোচিং-এর কী হলো? তারা জানালো যে, তারা মেয়েদের এখানে পড়ায় না বিধায়, মেয়েদের তো আসার সুযোগই নেই, ছেলেরাও এখানে পড়ে ‘মজা’ পায় না। তাই বাধ্য হয়ে এক পর্যায়ে সেন্টারটি বন্ধই করে দিতে হয়েছে।

* * *

এর প্রত্যেকটি সত্য ঘটনা। আমি নিজেই এর প্রত্যেকটির প্রত্যক্ষদর্শী।

টিনেজ বয়সটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটা বয়স। এই সময়ে কিশোর কিশোরীদের—বিশেষ করে বর্তমান সমাজের—মধ্যে ভালো-মন্দ বোঝার মতো কোনো পরিপক্কতা তৈরি না হলেও অপরাধ করার মতো শারীরিক ও মানসিক সকল সক্ষমতাই থাকে। কোন কাজের কী পরিণতি হতে পারে তা ভাবার মতো বুদ্ধি-জ্ঞান তাদের মধ্যে কাজ করে না। ক্ষণিকের ভালো লাগা, মন মাতানো আনন্দ, মাদকতা আর নিষিদ্ধ জিনিস তাদেরকে এমনভাবে টানে যে, তারা তা পাওয়ার জন্য যেকোনো রকম ঝুকি নিয়ে ফেলতে পারে।

তাই এই বয়সটাতে বাবা-মা’দের মোটেই উচিৎ নয় তাদেরকে কোনো বাছবিচার ও যাচাই বাছাই ছাড়া যেখানে সেখানে যেতে দেওয়া, যার তার সাথে মিশতে দেওয়া। আপনার সন্তান পড়ার নাম করে কোথায় যাচ্ছে; সেখানকার পরিবেশ কেমন সে সম্পর্কে যথাযথ খোজ খবর অবশ্যই আপনার রাখা উচিৎ। যে কোনো অকল্যাণকর কাজ ও পরিবেশ থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে রাখা উচিৎ। তবে এটা জোর করে বন্ধ না করে এর ক্ষতিকর দিকগুলো বুঝিয়ে বন্ধ করা অবশ্যই ভালো। তবে হ্যাঁ, যদি তারা বুঝ না নিতে চায় তবে একটু যত্নের সাথে জোর করে হলেও তাদেরকে নিয়ম শৃংখলার মধ্যে রাখতে হবে।

আপনার শিশু সন্তান যদি ইলেকট্রিক ছকেটের ভেতর হাত ঢুকাতে চায় আপনি কী করেন? যদি ধারালো কিছু নিয়ে খেলতে চায় আপনি কী করেন? যদি গ্যাসের চুলার কাছে যায় কী করেন? তারা চাইলেই কি আপনি তাদেরকে এসব করতে দেন? দেন না। তাহলে সেই প্রাণপ্রিয় সন্তানটি একটু বড় হবার কেন আপনি গা-ছাড়া ভাব দেখান? যেসব বিষয় তার স্বভাব-চরিত্র ও গোটা জীবনের সাথে সম্পৃক্ত সেখানে আপনি কিভাবে আপোষ করেন?

আপনার সন্তানকে যদি আপনি তার নিজ ইচ্ছা-মর্জির উপরই ছেড়ে দেন তাহলে আপনার তো আর কোনো প্রয়োজন নেই। আপনার একটু যত্নশীল কঠোরতা তার জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর আপনি যদি তার বন্ধু হতে গিয়ে তার কথামতো চলা শুরু করেন; আর একারণে যদি তাদের জীবন নষ্ট হয়ে যায় তাহলে এক সময় এই সন্তানরাই আপনাদের দোষ দেবে। বলবে তোমরা কেমন বাবা মা ছিলে? তোমরা কেন আমাদেরকে জোর করে সঠিক পথে রাখো নি? কেন আমাদেরকে সঠিক বুঝ দাও নি?

* * *

আমাদের সমাজে কিশোর অপরাধের যে চিত্র আমরা পত্রিকার পাতায় দেখি, তা তো আপনিও দেখেন। নিজ ক্লাসমেটকে হত্যা করে খেলার মাঠের পাশে বালু চাপা দিয়ে রাখা; ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে মধ্যরাতে ঐশির বাবা-মাকে হত্যা করার ঘটনা তো কারোই অজানা নয়। এমন আরো অসংখ্য কিশোর অপরাধের ঘটনা প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় আসে। কিন্তু তবুও আমাদের হুশ হয় না। আমরা সবসময়ই কোনো এক অজানা কারণে ভাবি ‘আমার সন্তানরা’ তেমনটা করবে না। মনে করি, এরা তো খারাপ কিংবা দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়ে। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই তা নয়। এদের অধিকাংশই আপনার আমার মতো তথাকথিত ভদ্র পরিবারের সন্তান।

প্রত্যেক বাবা-মা’ই নিজ সন্তানের প্রতি সবচেয়ে বেশী ভালোবাসা পোষণ করেন। করাটাই স্বাভাবিক। আর ভালোবাসা যে মানুষকে অন্ধ করে দেয় এটা শুধু প্রেমের ক্ষেত্রেই কিন্তু নয়, সন্তান সন্তুতির ক্ষেত্রেও হয়। নিজ সন্তানের একটা নিস্পাপ প্রতিচ্ছবি মনে সারাক্ষণ সেটে থাকার কারণে আমরা ভয়ংকর বাস্তব অভিজ্ঞতার শিকার হওয়ার আগে কখনোই তাকে অপরাধী ভাবতে পারি না। মনে করি, এতোটুকুন মাত্র ছেলে/মেয়েটি! কী আর বোঝে! আমার ছেলে/মেয়ে কি এই কাজ করতে পারে? আমরা চোখ বুজে থাকলেই কিন্তু বাস্তবতা কখনো পালটে যাবে না।

অতএব মধ্য রাতে নিজ সন্তানের হাতে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগেই সতর্ক হোন। আপনার মেয়েটি বিয়ের আগে গর্ভবতি হয়ে পড়ার আগেই সতর্ক হোন; মাদকাশক্ত হয়ে পড়ার আগেই খবর নিন, আপনার ছেলেটি বখে যাওয়ার আগেই তার তত্ত্বাবধানে যত্নশীল হোন। আপনি যদি সত্যিই মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে দয়া করে ভুলে যাবেন না যে, সেও একটি মানব সন্তান। মানব সন্তান কুকুরছানা নয় যে, খাবার আর থাকার জায়গা পেলেই চলে যাবে। বুঝবেন না তার যত্ন মানে কেবল তার উন্নত খাবার, অভিজাত ফ্ল্যাট, দামী জামা-কাপড় আর লেটেস্ট তথ্য-প্রযুক্তির উপকরণ হাতে তুলে দেওয়া।

সন্তানের তত্ত্বাবধানের সর্বপ্রধান কাজ হলো তাকে নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া। সকল অনৈতিকতা থেকে বাঁচিয়ে রাখা। আদর্শবান করে গড়ে তোলা। আপনার সন্তান কোনো পশুর বাচ্চা নয়, যে নিছক বস্তুগত চাহিদা পূরণ হলেই তার চলে যাবে। রাস্তাঘাটে আজকাল মেয়েরা যে ধরণের কাপড়-চোপড়ে বের হয় তা দেখে ভাবি, কোনো বাবা-মা’র চোখের সামনে দিয়ে এমন পোষাক পরে কিভাবে তারা বের হয়ে আসতে পারে? লজ্জা-শরম না হয় খেয়েই বসেছে, এদের কি রুচিবোধ বলতেও কিছু নেই? শালীনতা শব্দটি কি এদের ডিকশনারি থেকে হারিয়ে গেছে? এরা সত্যিই বাবা মা, নাকি নিছক ‘মানুষের ছাও উৎপাদনকারী’?

প্রখ্যাত লেখক মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ তার সন্তান প্রতিপালন বিষয়ক বই সন্তান : স্বপ্নের পরিচর্যা-তে একটি অতি গুরুত্বপুর্ণ কথা লিখেছেন। তিনি বলেন,

“আজকাল অনেক বাবা-মাই অভিভাবক হওয়ার বদলে সন্তানদের ‘বন্ধু’ হতে চায়। আর তাই বাচ্চাদের প্রতি সদয় হতে গিয়ে তাদের সকল চাওয়া পূরণ করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। তখন এই সন্তানরা অভিভাবক ও বন্ধুর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে না। বাবা-মারা সবকিছুতেই সন্তানদের সাথে আপস করতে থাকে এবং সন্তানরাও তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে, যতক্ষণ না তারা তাদের কাঙ্খিত জিনিসটি আদায় করতে পারে। ফলে বাচ্চাদের চাওয়া-পাওয়ার সীমারেখা দিন দিন বাড়তেই থাকে। তাই বাবা-মাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে সন্তানদের অনেক বন্ধু থাকতে পারে, কিন্তু বাবা-মা কেবল তারা দুজনই। তারা সন্তানদের অভিভাবক। বাবা-মায়ের ভূমিকা ছাড়া অন্য কোনো ভূমিকা পালন করাটা তাদের জন্য মোটেই ভালো নয়। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব হচ্ছে সন্তান যেন সত্যিকার আদর্শ-মানুষ হয় সেভাবে প্রতিপালন করা এবং এটাই তাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ”।

সন্তান : স্বপ্নের পরিচর্যা বইটি পেতে ক্লিক করুন – Https://Tinyurl.Com/4u572rr7

[বইটির ইংলিশ ভার্ষণের নাম Bringing up a Muslim child সিয়ান পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত]

* * *

যে তিনটি ঘটনাচিত্র দিয়ে আমি লেখা শুরু করেছিলাম সেখানে ফিরে আসি। আজ আমাদের কিশোর কিশোরীরা যেসকল কারণে বখে যাচ্ছে তার মধ্যে সামাজিক পারিবারিক অনেক কারণ রয়েছে নিঃসন্দেহে। আমি শুধু এখানে ফোকাস করতে চেয়েছি এই কিশোর বয়সে ছেলে-মেয়েতে অবাধ মেলামেশার দিকটিতে। আর এর অন্যতম একটি কেন্দ্র হচ্ছে এই কোচিং সেন্টারগুলো। তবে এটা যে শুধু কোচিং সেন্টারে হয়, তা-ই নয়। সহশিক্ষার স্কুল; এমনকি অসচেতন অনেক বাবা-মায়ের ঘরেও এমনটি হয়।

এভাবেই তারা এই অল্প বয়সে অবৈধ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আজকাল ইন্টারনেট, কম্পিউটার সহ তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের কারণে তারা শরীরতত্ত্বের এমন অনেক কিছুই জানে, যেগুলো হয়তো আপনি কেবল বিয়ের পরেই জেনেছেন। এসব বিষয়ের পরিণতি নিয়ে ভাবার মতো পরিপক্কতা না থাকলেও হেমিলনের বাঁশিওয়ালার মতো তা তাদেরকে মোহগ্রস্ত করে ফেলে।

যেহেতু এই বয়সটি মারাত্মক আবেগপ্রবণ একটি সময়, তাই এই সম্পর্ক তাদের মন-মননের উপর ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে। মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়, স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। লেখা-পড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। বাবা-মা ও পারিবারিক পবিত্র বন্ধন তাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। আর এই মানসিক দূরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তখন তারা মাদকের আশ্রয় নেয়। মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে হয় চোর, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী ইত্যাদি। ধ্বংস হয়ে যায় একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত। হ্যাঁ, এটা আপনারই সন্তানের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত।

আমি আপনাকে কোনো আখিরাতে মুক্তির ওয়াজ করছি না। আপনার পরিবারের শান্তির কথা বলছি। অশান্তি থেকে বাঁচার কথা বলছি। যা আপনার জীবনের প্রতিটি দিনকে প্রভাবিত করবে, আমৃত্যু। আখিরাত আপনি কতোটা বিশ্বাস করেন, সেটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আপনার বখাটে ছেলে বা মেয়েটা তো এই সমাজেরই অংশ। তার বখাটেপনার শিকার শুধু আপনি একাই হবেন না, আমিও হতে পারি; এই সমাজের আরো পাঁচ জন হতে পারে। নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য আপনার সন্তান আপনাকে রান্না ঘরের দাও-বঠি নিয়ে তেড়ে আসতে পারে। গলির মাথায় আমার পেটে ছুরি ঠেকাতে পারে; কারো হাতের মোবাইলটি নিয়ে দৌঁড় দিতে পারে। কি, আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না? আপনার সোনামনিটি এই কাজ করতে পারে?

ঐশির বাবা-মাও কিন্তু এমনটিই মনে করতো। তাদের সেই ‘মনে করা’ দিয়ে কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয় নি। অতএব সময় থাকতে সচেতন হোন। এক্ষুনি। হ্যাঁ, এক্ষুনি। আর কারো জন্য নয়, অন্য কারো স্বার্থে নয়। আপনার নিজের জন্য, নিজের স্বার্থেই।

© আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক
সিয়ান পাবলিকেশন
বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান

One thought on “আপনার সন্তান আমার সিঁড়িঘরে কী করে? — আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক

  1. Mubaswir Sabbir says:

    “Belief in the hereafter is solely your decision. I am talking about the social aspect of it.” — I’m afraid I have to disagree with these statements. If someone doesn’t believe in the hereafter and religion, he/she doesn’t have a standard of morality. So, right or wrong becomes vague for them, and so does your advice for them. The isolation of religious morals from our lives is the leading cause of this disaster. That’s why you can’t solve it without going back to religion. If secular ethics had the solution for this, we wouldn’t see this day.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *