আল্লাহ কুরআনে বলেন, “তোমরা আমার যিকির কর। আমি তোমাদের যিকির করব”। [বাকারাঃ ১৫২]
আল্লাহর এই যিকির বিশ্বাসীদের জীবনের অন্যতম সম্পদ। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাওয়াব অর্জনের অন্যতম পথ। মহাশত্রু শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হৃদয়কে রক্ষা করার অন্যতম উপায় আল্লাহর যিকির। চিন্তা, উৎকণ্ঠা ও হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম উপায় আল্লাহর যিকির। ভারাক্রান্ত মানব হৃদয়কে হিংসা, বিদ্বেষ, বিরক্তি, অস্থিরতা ইত্যাদির মহাভার থেকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় আল্লাহর যিকির। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের কামনা ও তাকওয়াকে হৃদয়ে সঞ্চারিত, সঞ্জীবিত, দৃঢ়তর ও স্থায়ী করার অন্যতম উপায় আল্লাহর যিকির। এর মাধ্যমে পার্থিব লোভ ও ভন্ডামী থেকে হৃদয়কে মুক্ত করা যায়। জাগতিক ভয়ভীতি ও লোভলালসা তুচ্ছ করে আল্লাহর পথে নিজেকে বিলিয়ে দিতে, তাঁর কালেমাকে উচ্চ করতে মুমিনের অন্যতম বাহন আল্লাহর যিকির।
অথচ এই মহামূল্যবান যিকিরের অপপ্রয়োগ হচ্ছে । যিকিরের নামে, দু’আর নামে, দরুদের নামে ও ওযীফার নামে বিভিন্ন বুজুর্গের বানানো শব্দ, নিয়ম, পদ্ধতি ইত্যাদি অতি যত্ন সহকারে পালিত হচ্ছে কিন্তু রাসূল (সঃ) এর পদ্ধতি অবহেলিত রয়ে যাচ্ছে। তাই রাসূলের (সঃ) দেখানো পথে আল্লাহ তায়ালার যিকিরের মাধ্যমে যিকিরের মূল উদ্দেশ্য আর ফায়দা যাতে হাসিল করা যায় সেই উদ্দেশ্যেই বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচনা করেছেন এই মহামূল্যবান কিতাব ‘রাহে বেলায়াত’। বইটি প্রকাশিত হয়েছে আস সুন্নাহ পাবলিকেশন্স থেকে।
Muhammad Tamimul Ihsan –
||বুক রিভিউ||
▪︎ জড়বাদী ও ভোগবাদী পাশ্চাত্য সভ্যতার তুমুল চাপে প্রভাবিত হয়ে পড়েছেন বিশ্বাসীরাও। একদিকে মানুষ যেমন জড়বাদী সমাজ ব্যবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসছে বিশ্বাসের পথে অন্যদিকে বিশ্বাসীদের জীবনে পড়ছে জড়বাদী,ভোগবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদী ছায়া। ঈমানের আধ্যাত্মিকতা,আন্তরিকতা আর নবীর প্রেম থেকে আমরা হয়ে পড়ছি বিচ্যুত। ইসলামী মূল্যবোধ হয়ে পড়ছে জাল এবং বানোয়াট জিনিস দিয়ে ভরপুর। দোয়া-দরুদ এবং জিকিরেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিকির কেমন ছিল আর আমরা কেমন করছি।তাই ইসলামী সঠিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে,আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় সম্পর্কে জানাতে এবং রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিকির এবং ওযীফা কি ছিল তা সম্পর্কে জানাতে বইটি রচনা করেন উম্মাহর একজন মহান দ্বায়ী ইলাল্লাহ ড.খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহি.) স্যার। বইটির শুরুতে ভূমিকা লিখে দিয়েছেন তারই শ্বশুর শেরে ফুরফুরা মাওলানা আবদুল কাহহার সিদ্দিকী ফুরফুরা পীর সাহেব (রাহি.)
▪︎ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহি.),বাংলাদেশে উনি এমন একজন দ্বায়ি ইলাল্লাহ ছিলেন প্রায় সবার নিকটই কম বেশি প্রিয় ছিলেন। সবসময় মধ্যমপন্থা অবলম্বনের চেষ্টা করতেন। চেষ্টা করতেন মুসলিম সমাজে ঐক্য গড়ার। বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারেননি। রোড এক্সিডেন্টে ইন্তেকাল করেন এই মহান দ্বায়ী ইলাল্লাহ। কিন্তু তার লিখিত কাজগুলো এখন মানুষের মনে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে অবিরত।আল্লাহ তার তুরবতকে (কবর) ঠান্ডা রাখুন।
▪︎ মূলত বইটিতে আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় এবং রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়া ও জিকির সম্পর্কে রচনা করেছেন। তবে বইটিতে এগুলো ছাড়াও এগুলো সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু আনুষাঙ্গিক বিষয় উঠে এসেছে। দুআ-দরুদ,আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়, সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ, ঝাড় ফুক এবং তাবিজ ইত্যাাদি সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে।
▪︎ বইটিকে ভাগ করা হয়েছে মোট সাতটি ভাগে। যেখানেই মূলত উঠে এসেছে এই বইটি সংক্রান্ত বিষয়গুলো।
১. বইটির প্রথম অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে বেলায়েত,ওসীলাহ এবং যিকির নিয়ে। যেখানে উঠে এসেছে বেলায়াত পথে কীভাবে অগ্রসর হওয়া যায়। ওলী-আউলিয়া কারা,আত্মশুদ্ধি এবং তাসাউফ মূলত কি এবং এগুলো অর্জনের পথে যে কুরআন সুন্নাহ সমর্থিত যিকিরগুলো করা যেতে পারে,বিদয়াত যিকির কোনগুলো ইত্যাদি সম্পর্কে বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে।
২. বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে বিশুদ্ধ ঈমান,ফরজ এবং নফল ইবাদাত পালন,কবীরা গুনাহ বর্জন, আল্লাহর পথে পথিকদের পাপ,যিকরের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ, আত্মশুদ্ধিমূলক মানসিক ও দৈহিক কর্ম,আল্লাহর প্রেম এবং আল্লাহর জন্য প্রেম,সাহচার্য ও বন্ধুত্ব, পীর-মুরিদী,যিকরের আদব ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে। তবে প্রত্যেকটি অধ্যায় আবার উপঅধ্যায়ে বিভক্ত।যেখানে সেই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে
৩. বইটির তৃতীয় অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে সালাত ও বেলায়াত নিয়ে। যেখানে উঠে এসেছে সালাতের সংক্ষিপ্ত বিধান ও নিয়ম,সালাতের শ্রেষ্ঠ যিকর,মুনাজাত ও দুআ,অতিরিক্ত কিছু নফল সালাত ইত্যাদি সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা। মোট কথা পুরো অধ্যায়টি সালাত সংক্রান্ত বিষয়গুলো দিয়ে ভরপুর।
৪.বইটির চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে মূলত দৈনন্দিন যিকির এবং ওযীফা নিয়ে।যেখানে সর্বোপ্রকারের দুআ দরুদ এবং যিকির ওযীফা দেওয়া আছে।
৫.বইটির পঞ্চম ভাগে এসে আলোচনা করা হয়েছে বিষয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন যিকর ও দুআ নিয়ে। যেখানে মূলত দৈনন্দিন জীবনে হাঁটতে চলতে বসতে প্রয়োজনীয় প্রায় সকল দুআ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
৬. বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ে এসে আলোচনা করা হয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় সম্পর্কে। রোগব্যাধি এবং ঝাড়ফুঁক নিয়ে। চিকিৎসা,ঝাড়ফুঁক, তাবিয সূতা, জিন যাদু ইত্যাদি সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। এই বিষয় সম্পর্কে তেমন একটা না জানা পাঠককে এই বিষয় সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দিবে বইটি।
৭.বইটির শেষ অধ্যায়ে এসে আলোচনা করা হয়েছে মজলিসে জিকির এবং জিকিরের মজলিস সম্পর্কে। যেখানে উঠে এসেছে যিকরের মজলিসেট যিকর পদ্ধতি।যিকির মজলিস এবং আমাদের করনীয়,কারামত,হালাত এবং অলীগণ নিয়ে এক বিস্তারিত পর্যবেক্ষণকৃত পর্যালোচনা। বিশ্লেষণধর্মী আলোচনাই বেশি করা হয়েছে বইটিতে।
▪︎ বইটি কারা পড়বেন এবং কেন পড়বেন..??? যারা কুরআন সুন্নাহ সমর্থিত প্রকৃত দুআ-দরূদ এবং জিকির সম্পর্কে অবগত হতে চান তাদের জন্য এই বইটি। বইটি এই কারণে পড়বেন যাতে দুআ দরুদ সংশ্লিষ্ট বিতর্কিত বিষয়গুলো সম্পর্কে ক্লিয়ার হওয়া যায় এবং কুরআন সুন্নাহ সমর্থিত দুআ দরুদ, জিকির আযকার সম্পর্কে জানা যায়।
▪︎ ব্যক্তিগত অনুভূতি : মাঝে মাঝে মানুষ ভূলের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার পর আবার যখন আলোর পথ দেখে তখন তার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কখনো সম্ভব না। বাজারের বানোয়াট দুআ দরুদ পড়তে নিজের কান যে কোনো দিন খুলে যাবে কল্পনাও করতে পারিনি। শুদ্ধ তওহীদের আলো মানুষের মাঝে প্রবেশই হোক বইটির উদ্দেশ্য।
▪︎ সর্বোপরি কথা হচ্ছে দুআ দরুদ,সালাত,জিকির অাযকার সহ যত ইবাদাত সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মানুষের জীবনে সবগুলো নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে। বাংলার সব মানুষেরই বইটি পড়া উচিৎ বলে মনে করে থাকি।
▪︎ ব্যক্তিগত রেটিং : ৫/৫
মাআসসালাম…………!!