‘আত্মপরিচয়’ শব্দটা সকলের কাছে পরিচিত হলেও অধিকাংশ মানুষ সত্যিকার অর্থেই ‘আত্মপরিচয়’ সম্পর্কে সম্যক অবগত নয়। শুধু সাধারণই নয়, জিজ্ঞাসা-পিপাসু মানুষকেও যদি নিজের আত্মপরিচয় সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দিতে বলা হয়, আমার ধারণা—তিনি লেজেগোবরে করে ফেলবেন। এর কারণ হলো, আমরা পারিপার্শ্বিক ব্যাপারে যতখানি না সন্ধিগ্ধ, নিজেদের আত্মপরিচয়ের বেলায় ঠিক ততখানিই বেখবর।
‘Know Thyself’ সক্রেটিসের বিখ্যাত একটি উক্তি। সক্রেটিস নিজেকে জানতে বলেছেন। নিজেকে জানতে পারার মধ্যেই সক্রেটিস মানবজীবনের সার্থকতা খুঁজেছেন। সক্রেটিসের এই দর্শন আদতে কানায় কানায় সত্য। মানবজীবন ঠিক তখনই পরিপূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করে যখন মানুষ নিজেকে জানতে শুরু করে ও আত্মপরিচয়ের ব্যাপারে প্রলুব্ধ হয়। নিজেকে উদঘাটন করতে পারলেই ঠিক করে ফেলা যায় জীবনের দর্শন। জীবনের গন্তব্য, উদ্দেশ্য এবং রদবদল, সবকিছু সহজ হয়ে যায় যদি নিজেকে জানা যায়। যদি একেবারে শেকড়ে ফিরে চেনা যায় নিজের প্রকৃতি।
‘মুসলমান’ হিসেবে এই ব্যাপারটা আরও বিশদভাবে সত্য। আমরা যদি নিজেদের আত্মপরিচয়, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রদত্ত গৌরবময় মর্যাদা ‘মুসলমানিত্বের’ সঠিক মর্মার্থই বুঝতে না পারি, তাহলে কীভাবে নির্ধারণ করব নিজেদের গন্তব্য এবং উদ্দেশ্য? কেন-ই বা আমরা মুসলিম, অন্যরা কেন নয়, কীভাবে আমরা মুসলিম হলাম, আমাদের ঠিক আগে, আল্লাহর একাত্মবাদে যারা আসীন ছিলেন, তারা কোন পরিচয়ে ধন্য হয়েছেন, তাদের সাথে আমাদের যোগসাজশ কোথায়? সাদৃশ্য আর বৈসাদৃশ্য কী কী—এসব জানতে পারাই হলো আমাদের আত্মপরিচয় সন্ধানের প্রথম সবক।
‘শেকড়ের সন্ধানে’ বইতে লেখিকা হামিদা মুবাশ্বরা ঠিক আমাদের জন্য এই কাজটিই করেছেন। তিনি আমাদের নিয়ে গেছেন অতীতে—একেবারে গোড়ায়, যেখান থেকে আমাদের আত্মপরিচিতির শুরু। কত হাওয়া বদল করে, কত বাঁক পেরিয়ে, কত সময় পার করে, কত ঘাত-প্রতিঘাতে আমরা আমাদের শেষ পরিচয়, ‘মুসলমান’—এ এসে ঠেকেছি, সেই মহাযাত্রার রহস্যপানে লেখিকা আমাদের ভ্রমণ করিয়েছেন। লেখিকা কেবল আমাদের সোর্স থেকে আমাদের ক্ষুধা, তৃষ্ণা নিবারণ করাননি। তিনি আমাদের কখনো তাওরাতে, কখনো ইঞ্জিলে, আবার কখনো কুরআনে ডুব দিইয়েছেন। প্রসঙ্গক্রমে ঢুকে পড়েছেন বিশাল বিস্তৃত হাদিসশাস্ত্রের ভেতরেও। লেখিকার অণ্বেষণ প্রক্রিয়া, জানার তীব্র আকাঙ্খা, সত্যকে আজলা ভরে তুলে আনার ঢঙ বেশ আশাজাগানিয়া। এ রকম একাডেমিক একটা বিষয়কে তিনি কীভাবে সাধারণ মানুষদের জন্যও উপযোগী করে ফেললেন তা-ও বিস্ময় জাগানিয়া!
বইটি অনেক তৃষিত প্রাণের আত্মার খোরাক হবে, ইন শা আল্লাহ। নিজেদের আত্মপরিচয়ের সন্ধানে পরিব্যাপ্ত যাদের হৃদয়-মন, তাদের জন্য ‘শেকড়ের সন্ধানে’ হয়ে উঠবে নতুন একটি আলোর মশাল, যা তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে সুদূরে, একেবারে শেকড়ে, ইন শা আল্লাহ। লেখিকার জন্য আমাদের প্রাণভরা দুআ। আল্লাহ যেন তার কলমে ভরপুর বারাকাহ দান করেন। বইটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যও রইল দুআ। এমন একটি কাজ করতে পেরে সমকালীন পরিবারও আনন্দিত। আল-হামদু লিল্লাহ।
Reviews
There are no reviews yet.