৪৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইয়াসরিবের সবুজ ভূ-খণ্ডে জন্ম নেয় এক বিস্ময়কর আরব শিশু। মাথাভর্তি সাদা চুল দেখে মা তার নাম রাখেন শাইবা। পরিণত বয়সে এই শাইবা হয়ে ওঠেন জাহিলি আরবের কিংবদন্তিতুল্য নেতা আবদুল মোত্তালিব। ‘পিতামহ’ এই শুভ্রচুলের মক্কানেতা আবদুল মোত্তলিবের জীবনাশ্রিত উপন্যাস।
ইতিহাসের এমন এক সন্ধিক্ষণে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আবদুল মোত্তালিব, তার সময়ের মক্কা স্মরণকালের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি পাড়ি দিচ্ছিল। নবি-জন্মের পূর্বাভাস, কন্যাশিশু হত্যা, গোত্রীয় দাঙ্গা, কৌলিন্য প্রথা, প্রেম-দ্রোহ, কাব্যযুদ্ধ, দাসব্যবস্থা, লুটতরাজ, হস্তিবাহিনীর কাবা আক্রমণ—গোটা আরব অগ্নিগর্তের কিনারায় অবস্থান করছিল। পিতামহ সেই অগ্নিগর্ভ সময়ের দলিল।
প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বের আরব্য ইতিহাসের টালমাটাল সেই সময়টাকে মনোরম গদ্যে, বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে, শাঁসসমেত তুলে এনেছেন একুশ শতকের বাঙালি কথাশিল্পী সাব্বির জাদিদ।
পাঠক, ইতিহাসের মরুবালিতে পা ডুবিয়ে, এক সংবেদী শিল্পীর জাদুময়ী ভাষায়, আসুন পাঠ করি ষষ্ঠ শতকের অন্ধকারচ্ছন্ন আরবকে এবং আমাদের পিতামহকে।
Najmul Hasan Sajib –
#আড্ডাখানা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_সেপ্টেম্বর
#অনুভূতির_প্রকাশক
.
অল্পস্বল্পকথা
.
.
সাব্বির জাদিদের লেখা “পিতামহ” একটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস। সুদীর্ঘ ১৫০০ বছর আগের আরবের প্রেক্ষাপটে লেখা। লেখক তথ্যসূত্রে ১৮টি বইয়ের কথা তুলে ধরেছেন তাতে বুঝতে পারলাম অনেক পরিশ্রম করেছেন বইটা লিখতে। উপন্যাসটি তিনটি পর্বে বিভক্ত
১.মক্কা-পর্ব
২.ইয়েমেন-পর্ব
৩.যৌথ-পর্ব
.
সবচেয়ে বেশি বর্ণনা মক্কা-পর্বেই রয়েছে। আবার প্রত্যেকটা অধ্যায়ের শুরুর আগে থাকা টাইটেলগুলো খুবই আকর্ষণীয়।
.
উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর দাদা অর্থাৎ কুরাইশ বংশের জনপ্রিয় নেতা আবদুল মুত্তালিব। আবার কখনও মনে হয়েছে তালহা। তালহা,কায়েস,উমাইয়া,সাফিয়া,হুমাইরা,হামামা, সামিরা বিনতে জুন্দুব,আবরাহাসহ আরো কিছু চরিত্রকে মনে হয় জীবনের একেকটা ব্রীজ। চরিত্রগুলি সহজেই পাঠক হৃদয়মাঝে স্থান করে নিবে ইনশাআল্লাহ।
.
.
লেখককথা
.
সাব্বির জাদিদ ভাইয়ার সাথে পরিচয়টা পরিচিত একজন পাঠকের মাধ্যমে। কিছু বই সাজেস্ট করে ছিল। যেমন -“ভাঙ্গনের দিন”, “একটি শোক সংবাদ”।লেখকের জন্ম কুষ্টিয়ায়, লেখাপড়া করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে, ধর্মতত্ত্বে অনার্স। প্রায় ১০ বছর অধিক সময় ধরে লিখছেন দৈনিক সাহিত্য পাতায়। আরেকটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে লেখক ব্যক্তিজীবনে একজন আলেম ও ইমাম।
.
.
কাহিনীকথা-
.
১.
বনু সুলাইলাম গোত্রের একদম্পতি ওসমান-জয়নব, তিনকন্যার জন্মের পর তাদের জীবন্ত কবর দেয়া হয়।কন্যাশোকে একসময় দেবতার নিকট এক কঠিন মানত করে বসেন জয়নব। যদি ছেলে সন্তান জন্ম নেয় তাহলে দেবতার উদ্দেশ্য ১০টি উট কুরবানী করবেন। একসময় জন্ম নেয় “তালহা”। ১০টি উট ঋণ নেয় কুরাইশের এক গোত্রের নেতা উমাইয়ার কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে। কিন্তু ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ওসমানের পরে নিয়তির নিষ্ঠুরতায় মাত্র ১২ বছর বয়সে উমাইয়ার বাড়ির দাস হয় তালহা। তালহা উমাইয়ার বাড়ির ভেড়ার পাল দেখাশুনা করত।
উমাইয়া ও তার ছেলেরা তালহার সাথে কঠোর আচরণ করত কিন্তু উমাইয়াকন্যা ‘সাফিয়া’ ছিল ব্যতিক্রম, কোমল প্রকৃতির। যার হৃদয় তালহার জন্য অহরহ ব্যথিত হতো।
সমবয়সীপ্রায়, তালহার ভদ্রতা, সততা সাফিয়াকে মন্ত্রমুগ্ধ করে। সাফিয়া আকারে-ইঙ্গিতে তালহাকে তার আবেগ-অভিভক্তির কথা বুঝাতে চেষ্টা করে, তবে তালহা সবই বুঝে নিরবতা দিয়ে বাস্তবতায় পথ খোঁজে। তালহা জানে মনিব-দাসের গন্তব্য কখনও এক হয় না।
.
তালহার উমাইয়ার দাসত্বে থেকে বন্ধু বলতে একজনই আছে নাম ‘কায়েস’। ভেড়ার পাল চড়ানোর সময় দুজনের গভীরতর বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। কায়েসের জন্ম হাজারা মাউতে কিন্তু তার নিয়তির কারণে এখন মক্কায়। কায়েসের পিতা মৃত্যুবরণ করেন এক ডাকাতদলের আক্রমণে প্রতিরোধ করতে গিয়ে। তার মা আর কায়েসকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয় ডাকাতদল । কায়েসের মনিব মক্কার সরদার আব্দুল মুত্তালিব, কায়েসের সাথে তার মনিব কখনোই দাসের মতো আচরণ করেনি। আবদুল মুত্তালিবের ব্যবহার ছিল অমায়িক। তিনি অন্য দাসদের থেকে কায়েসকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন।
.
২.
আবদুল মুত্তালিবের জন্মটা ইয়াসরিবে মাতুলালয়ে। জন্মের সময় মাথাভর্তি শুভ্র চুল দেখে মাতা ‘সালমা বিনতে আমর’ ছেলের নাম রাখেন শাইবা। শাইবার মাতা বিয়ের সময় একটা শর্তজুড়ে দেয় শাইবার পিতা হাশিমকে –
“তিনি পিতৃগৃহে সর্বদা থাকবেন মক্কায় যাবেন না কখনই”।
শর্তসাপেক্ষে তিনি কখনোই মক্কা যাননি। বালক শাইবাকে তার চাচা মুত্তালিব মক্কায় নিয়ে আসেন। দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার ফলে শাইবার দেহসজ্জায় ধুলোবালিতে ভরপুর হয়ে যায়। আরবের লোকজন তাকে মুত্তালিবের নব্য কেনা দাস ভাবতে শুরু করে।
.
তখন আরবের দাসদের অমুকের দাস বলে ডাকার সুবিধার জন্য মনিবের নামের আগে ‘আবদ্’ শব্দ লাগানো হতো। যার ফলে শাইবা হয়ে উঠে “আবদুল মুত্তালিব”। কাবাঘরের ভবিষ্যৎ নেতার কথা বিবেচনা করে ভাতিজা শাইবাকে ঠিক মনে করেন চাচা মুত্তালিব।
.
আবদুল মুত্তালিব বাল্যকাল থেকেই সবার হৃদয় জয় করেন। পরিশ্রমী, ভদ্র, শান্ত প্রকৃতির, ধৈর্য্যশীল সব গুণাবলিতে আবদুল মুত্তালিবে বিদ্যমান। পরিণত বয়সে তার পিতার দায়িত্ব হজের সময় হাজীদের আহারকার্য পরিচালনার কাজ করেন। অল্পদিনেই আরবসহ অন্যান্য অঞ্চলে তার সুনাম ছড়িয়ে পরে। দরিদ্রদের সাহায্য, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো হয়ে উঠে তার অন্যতম কাজ।
.
৩.
আল্লাহ তায়ালা স্বপ্নের মাধ্যমে জমজম কূপের সন্ধান দেন আবদুল মুত্তালিবকে (বইটা পড়লে টুইস্ট পাবেন এখানে) এবং একসময় জমজম কূপ আবিস্কার করেন কিন্তু আরবের কুরাইশ নেতারাও কুয়ার মালিকানা দাবি করে। এই বিষয়টা মীমাংসিত হয় এভাবে শামের এক বিচক্ষণ নারী জ্যাোতিষীর সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিবে।
.
নির্দিষ্ট দিনে সকল গোত্রের লোকবল নিয়ে শামের উদ্দেশ্য যাত্রা করে আবদুল মুত্তালিব ও তার সফরসঙ্গী দাস কায়েস। আব্দুল মুত্তালিবের মিত্রগোত্রের সাথীদের মুর্খতা, উটের অসুস্থতা, একসময় পথ হারিয়ে পানিশূণ্য হয়ে পড়ে সবাই অজানা মরুভূমিতে। ভবিষ্যৎ আশঙ্কা করে সবাই মৃত্যুর জন্য নিজের কবর খোঁড়া পর্যন্ত শুরু করে। কিন্তু আবদুল মুত্তালিবের উটের তলা থেকে অলৌকিকভাবে পানি বের হওয়া শুরু হলে সবাই বুঝতে পারে জমজমের মালিক একমাত্র আবদুল মুত্তালিব হবে এটা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা চান। যার ফলে কেউ আর আবদুল মুত্তালিবের বিরুদ্ধাচারণ করেনি।
.
৪.
জমজম কুয়ার কাজে ও শাম যাত্রায় মনিবের প্রতি কায়েসের অতিভক্তি মুগ্ধ করে আবদুল মুত্তালিবকে। তিনি কায়েসকে মুক্তি দান করেন দাসত্ব থেকে।
উমাইয়াকন্যা সাফিয়া ও আবদুল মুত্তালিবের চেষ্টায় একসময় তালহাও দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে শর্তসাপেক্ষে। আবদুল মুত্তালিব থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে কায়েস এবং জড়িয়ে যায় তালহার বোন হুমাইয়ার সাথে প্রণয়ে। হজের পরই তাদের বিয়ে সবকিছুই আগে থেকেই ঠিকঠাক হয়।
.
হজ মৌসুমে প্রত্যেক বছর মক্কায় বৃহৎ মেলার আয়োজন হয়, বসে কবিদের কবিতাপ্রতিভা দেখানোর সুযোগ। এই মেলাতে তালহা, হুমাইরা আর কায়েস এসেছিল এবং কারণবশত তালহা থেকে যায় মেলাতে। মেলা দেখে রাতে ফেরার পথে উমাইয়াপুত্র সুফিয়ানের আক্রমণে হুমাইরা আর কায়েস মারা যায়। মৃত্যুর পূর্বে তালহাকে হুমাইরা সুফিয়ানের নাম বলে যায়।
তালহা উমাইয়ার বাড়িতে গিয়ে সুফিয়ানকে হত্যা করে এবং সাফিয়াকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর ফলে তালহাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। সুফিয়ানকে হত্যার ফলে উমাইয়া তালহাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে তার বাবা-মা,দাদি ও ছোট ভাইকে পুড়িয়ে হত্যা করে। পরিবার হারিয়ে তালহা পাড়ি দেয় অজানার পথে….
.
৫.
পলাতক পথিক তালহা মক্কা থেকে পৌঁছে যায় সুদূর মাআরিবে। বিপদ থেকে রক্ষা করে পরিচয় হয় হামামার সহিত, হামামার চাচা আবরাহা মাআরিবের গভর্নর। আবরাহার শয়নে স্বপনে জাগরণে শুধুই ইয়েমেনের সম্রাট হওয়ার তীব্র লোভ।
আবরাহার স্বপ্নপূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে স্বয়ং তালহা। একসময় অন্যায়যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আবরাহা ইয়েমেনের সম্রাট হন এবং তালহাকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান দেয়। কিন্তু তালহাকে ধর্মদ্রোহী বলে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং বেদনাদায়ক শাস্তিস্বরুপ হাতের আঙুল কেটে নেয়।
.
সুদীর্ঘ ৫ বছরের কারাবাসের পর হামামার সহায়তায় কারাগার থেকে পালাতে সক্ষম হয় তালহা। কিন্তু পালাতে গিয়ে একসৈন্যের আক্রমণে রক্তাক্ত হয়ে তুবাইক পাহাড়ের নিচে পড়ে থাকে জীবন্মৃত হয়ে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে এক বেদুঈন পল্লীর সরদার শেইখ সামির এবং তার একমাত্র কন্যা মাইমুনা। সরদার কন্যার সেবাযত্নে তালহা সুস্থ হয়ে ওঠে। একসময় মাইমুনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় তালহা।
.
৬.
ইয়েমেনে সম্রাট আবরাহা অতিশয় এক গির্জা তৈরি করে মূলউদ্দেশ্য মক্কা ছেড়ে পৃথিবীর মানুষ তার এই গীর্জায় হজ পালন করবে। কিন্তু কাবার প্রতি মানুষের ভালোবাসার দরুন গীর্জায় আবরাহার ডাকে কেউ সারা দেয় নি। নব্য নির্মিত গীর্জায় মলত্যাগ করে কেউ এবং তালহারা আক্রমণ করে পালিয়ে যায়।
.
আবরাহা ধারণা করে মক্কার মানুষের এই কাজ। তখন বিশাল হস্তিবাহিনী নিয়ে মক্কার পথে যাত্রা করে কাবাঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। আবদুল মুত্তালিবের উট চারণভূমি থেকে চুরি হলে আবরাহা থেকে ফেরত নিয়ে বলেন, ‘কাবার মালিক কাবাকে রক্ষা করবেন’।
.
আবরাহার বাহিনী কাছাকাছি আসার আগেই মক্কার সমস্ত মানুষ একটি পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। হস্তীবাহিনী কাবা আক্রমণ করলে ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট ছোট আসমানি পাখিরা এসে পাথর নিক্ষেপ করে আবরাহার বাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়, আবরাহাসহ অনেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু একসময় সবাই মৃত্যুবরণ করেন।
.
তালহাকে দিয়ে উপন্যাসের সূচনা হয় আবার ইতি টানেন তালহাকে দিয়েই।
সাফিয়া তার স্বামীকে খুন করে পালানোর সময় তালহার সাথে দেখা হয়। দুজন পাড়ি দেয় নবজীবনের সন্ধানে…
.
.
উপন্যাসের লাস্ট দুটি লাইন তুলে ধরলাম–
“সুবহে সাদিকের সময় তালহা ও সাফিয়া ইয়াসরিবের উদ্দেশ্যে ঘোড়ায় চড়ে বসে। আর ঠিক তখনই আসমান ছিঁড়ে মা আমেনার কোলে নেমে আসে এক বেহেশতি শিশু”
.
(বিঃদ্র- “পিতামহ” পড়ার পর আপনার পছন্দসই একটা সীরাত পড়া বাধ্যতামূলক মনে করি। মাজিদা রিফার মহানবী(সা.) বেশ ভালো, পড়তেও উপন্যাসের মতো লাগে )
.
.
চরিত্রকথন-
.
১.
আবদুল মুত্তালিব সম্পর্কে বলার তো কিছুই নাই জাস্ট ওয়াও। প্রত্যেকটা গুণাবলি আবদুল মুত্তালিবে বিদ্যমান। একজন মানুষ কতটা মহৎ প্রকৃতির হতে পারে বুঝতে পারলাম।
.
২.
উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র তালহা। উপন্যাসের শুরু-শেষ হয়েছে তালহার মাধ্যমে । তালহা ও আবদুল মুত্তালিব সম্পর্কে জানতে উপন্যাসই শ্রেয়।
.
৩.
কায়েস চরিত্রটা খুবই ইন্টারেস্টিং লেগেছে আমার কাছে। হাসিখুশি,সাহসী কিন্তু জীবনে লুকিয়ে আছে বেদনাময় কাব্য। কিন্তু তার শেষ পরিণতিটা বেদনাদায়ক।
.
৪.
সামিরা বিনতে জুন্দুব অর্থাৎ আবদুল মুত্তালিবের ১ম স্ত্রী। কঠিনতম সময়ে স্বামীকে সহায়তা করায় তার তুলনা হয়না।
.
৫.
উমাইয়াকন্যা সাফিয়া চরিত্রটা কোমলপ্রাণ। তালহার দাসত্বের সময় সবচেয়ে হেল্প করেছে সাফিয়া। যাই হোক সাফিয়াকে উপন্যাসে ডুবেই খুঁজে নিলেই ভালো হবে।
.
৬.
হুমাইরা,হামামা, মাইমুনা, ফাতেমা চরিত্রগুলো নজর করা।
হামামা ছিল সম্রাট আবরাহার ভাতিজি ভাগ্যক্রমে সে একসময় হয় মক্কার দাসী। একসময় তার গর্ভে জন্ম নেয় ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বিলাল(রা.)।
.
হুমাইরা হলো তালহার বোন। মাইমুনা হল বেদুইন সরদারকন্যা এবং তালহার স্ত্রী। তার পরিণতি ছিল গর্ভাবস্থায় মৃত্যু।
.
ইয়াসরিবে ফাতেমার সেবায় মৃত্যু থেকে তালহা বেঁচে ফিরে তালহা। ফাতেমা চরিত্রটাও দারুণ।
.
আরো অনেক চরিত্র আছে জানতে পারেন “পিতামহ” এ ডুব দিয়ে।☺
.
.
অগোছালোকথা
.
উপন্যাসের সবচেয়ে আর্কষণীয় চরিত্র তালহা। লেখকের লেখার জাদুতে তালহাকে সমস্ত আবেগ ঢেলে চিত্রিত করেছেন।
“সুখ সে তো ক্ষণিকের জন্য আসে দুঃখই যেন চিরসাথী”
এই কথাটি তালহার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তালহা চরিত্রটাই সবার মনে দাগ কাটবে।
.
“যে জীবন ফরিঙের” ও “সিদরাতুল মুনতাহার হলুদ পাতারা” পর্বটা পড়ার সময় বিষন্নতায় ছুঁয়ে যায় মন।
.
“কুমারিত্বের পরিক্ষা” পর্বটা পড়ে হাসতে হাসতে শেষ।😂 এই জন্যই তো যুগটারে অন্ধকারাচ্ছন্ন জাহেলিয়াত বলে।
.
.
সাব্বির জাদিদের চমৎকার বর্ণনা আর চরিত্রচিত্রণ খুবই নান্দনিক। বেশি কিছু বলবো না শুধু বলে রাখি লেখকের এই বইটার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাকে মনে রাখবে আজীবন।
.
.
সমালোচনা নহে অভিমত
.
১.
আবরাহার মক্কা আক্রমণের বর্ণনা একটু সময় নিয়ে শেষ করতে পারতেন। তাড়াহুড়ো করেছেন মনে হয়েছে।
.
২.
মাইমুনা-তালহার মিলনের বর্ণনাটা একটু দৃষ্টিকটু লাগল।
.
৩.
” অন্ধ উনাইসের ভিক্ষাবৃত্তির ঘটনা নবি মুহাম্মাদের স্ত্রী আয়েশা আমাদের জানাবেন ”
এই বাক্যে দরূদ শরীফ লেখা এবং আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার নাম নেয়া উচিত ছিল। নেক্সট সংস্করণে ঠিক করার অনুরোধ রইল লেখকের প্রতি।
.
পরিশেষে “পিতামহ”কে স্বয়ং বিচার করুন প্রিয় পাঠক।
.
বইয়ের নামঃ পিতামহ
লেখকঃ সাব্বির জাদিদ
প্রকাশনীঃ ঐতিহ্য
প্রকাশঃ২০ বইমেলা
প্রচ্ছদ মূল্যঃ ৮০০ টাকা
পৃষ্ঠাঃ ৫২৪
প্রচ্ছদ-কাজী যুবাইর মাহমুদ
Najmul Hasan Sajib –
#অনুভূতির_প্রকাশক
.
অল্পস্বল্পকথা
.
.
সাব্বির জাদিদের লেখা “পিতামহ” একটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস। সুদীর্ঘ ১৫০০ বছর আগের আরবের প্রেক্ষাপটে লেখা। লেখক তথ্যসূত্রে ১৮টি বইয়ের কথা তুলে ধরেছেন তাতে বুঝতে পারলাম অনেক পরিশ্রম করেছেন বইটা লিখতে। উপন্যাসটি তিনটি পর্বে বিভক্ত
১.মক্কা-পর্ব
২.ইয়েমেন-পর্ব
৩.যৌথ-পর্ব
.
সবচেয়ে বেশি বর্ণনা মক্কা-পর্বেই রয়েছে। আবার প্রত্যেকটা অধ্যায়ের শুরুর আগে থাকা টাইটেলগুলো খুবই আকর্ষণীয়।
.
উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর দাদা অর্থাৎ কুরাইশ বংশের জনপ্রিয় নেতা আবদুল মুত্তালিব। আবার কখনও মনে হয়েছে তালহা। তালহা,কায়েস,উমাইয়া,সাফিয়া,হুমাইরা,হামামা, সামিরা বিনতে জুন্দুব,আবরাহাসহ আরো কিছু চরিত্রকে মনে হয় জীবনের একেকটা ব্রীজ। চরিত্রগুলি সহজেই পাঠক হৃদয়মাঝে স্থান করে নিবে ইনশাআল্লাহ।
.
.
লেখককথা
.
সাব্বির জাদিদ ভাইয়ার সাথে পরিচয়টা পরিচিত একজন পাঠকের মাধ্যমে। কিছু বই সাজেস্ট করে ছিল। যেমন -“ভাঙ্গনের দিন”, “একটি শোক সংবাদ”।লেখকের জন্ম কুষ্টিয়ায়, লেখাপড়া করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে, ধর্মতত্ত্বে অনার্স। প্রায় ১০ বছর অধিক সময় ধরে লিখছেন দৈনিক সাহিত্য পাতায়। আরেকটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে লেখক ব্যক্তিজীবনে একজন আলেম ও ইমাম।
.
.
কাহিনীকথা-
.
১.
বনু সুলাইলাম গোত্রের একদম্পতি ওসমান-জয়নব, তিনকন্যার জন্মের পর তাদের জীবন্ত কবর দেয়া হয়।কন্যাশোকে একসময় দেবতার নিকট এক কঠিন মানত করে বসেন জয়নব। যদি ছেলে সন্তান জন্ম নেয় তাহলে দেবতার উদ্দেশ্য ১০টি উট কুরবানী করবেন। একসময় জন্ম নেয় “তালহা”। ১০টি উট ঋণ নেয় কুরাইশের এক গোত্রের নেতা উমাইয়ার কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে। কিন্তু ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ওসমানের পরে নিয়তির নিষ্ঠুরতায় মাত্র ১২ বছর বয়সে উমাইয়ার বাড়ির দাস হয় তালহা। তালহা উমাইয়ার বাড়ির ভেড়ার পাল দেখাশুনা করত।
উমাইয়া ও তার ছেলেরা তালহার সাথে কঠোর আচরণ করত কিন্তু উমাইয়াকন্যা ‘সাফিয়া’ ছিল ব্যতিক্রম, কোমল প্রকৃতির। যার হৃদয় তালহার জন্য অহরহ ব্যথিত হতো।
সমবয়সীপ্রায়, তালহার ভদ্রতা, সততা সাফিয়াকে মন্ত্রমুগ্ধ করে। সাফিয়া আকারে-ইঙ্গিতে তালহাকে তার আবেগ-অভিভক্তির কথা বুঝাতে চেষ্টা করে, তবে তালহা সবই বুঝে নিরবতা দিয়ে বাস্তবতায় পথ খোঁজে। তালহা জানে মনিব-দাসের গন্তব্য কখনও এক হয় না।
.
তালহার উমাইয়ার দাসত্বে থেকে বন্ধু বলতে একজনই আছে নাম ‘কায়েস’। ভেড়ার পাল চড়ানোর সময় দুজনের গভীরতর বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। কায়েসের জন্ম হাজারা মাউতে কিন্তু তার নিয়তির কারণে এখন মক্কায়। কায়েসের পিতা মৃত্যুবরণ করেন এক ডাকাতদলের আক্রমণে প্রতিরোধ করতে গিয়ে। তার মা আর কায়েসকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয় ডাকাতদল । কায়েসের মনিব মক্কার সরদার আব্দুল মুত্তালিব, কায়েসের সাথে তার মনিব কখনোই দাসের মতো আচরণ করেনি। আবদুল মুত্তালিবের ব্যবহার ছিল অমায়িক। তিনি অন্য দাসদের থেকে কায়েসকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন।
.
২.
আবদুল মুত্তালিবের জন্মটা ইয়াসরিবে মাতুলালয়ে। জন্মের সময় মাথাভর্তি শুভ্র চুল দেখে মাতা ‘সালমা বিনতে আমর’ ছেলের নাম রাখেন শাইবা। শাইবার মাতা বিয়ের সময় একটা শর্তজুড়ে দেয় শাইবার পিতা হাশিমকে –
“তিনি পিতৃগৃহে সর্বদা থাকবেন মক্কায় যাবেন না কখনই”।
শর্তসাপেক্ষে তিনি কখনোই মক্কা যাননি। বালক শাইবাকে তার চাচা মুত্তালিব মক্কায় নিয়ে আসেন। দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার ফলে শাইবার দেহসজ্জায় ধুলোবালিতে ভরপুর হয়ে যায়। আরবের লোকজন তাকে মুত্তালিবের নব্য কেনা দাস ভাবতে শুরু করে।
.
তখন আরবের দাসদের অমুকের দাস বলে ডাকার সুবিধার জন্য মনিবের নামের আগে ‘আবদ্’ শব্দ লাগানো হতো। যার ফলে শাইবা হয়ে উঠে “আবদুল মুত্তালিব”। কাবাঘরের ভবিষ্যৎ নেতার কথা বিবেচনা করে ভাতিজা শাইবাকে ঠিক মনে করেন চাচা মুত্তালিব।
.
আবদুল মুত্তালিব বাল্যকাল থেকেই সবার হৃদয় জয় করেন। পরিশ্রমী, ভদ্র, শান্ত প্রকৃতির, ধৈর্য্যশীল সব গুণাবলিতে আবদুল মুত্তালিবে বিদ্যমান। পরিণত বয়সে তার পিতার দায়িত্ব হজের সময় হাজীদের আহারকার্য পরিচালনার কাজ করেন। অল্পদিনেই আরবসহ অন্যান্য অঞ্চলে তার সুনাম ছড়িয়ে পরে। দরিদ্রদের সাহায্য, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো হয়ে উঠে তার অন্যতম কাজ।
.
৩.
আল্লাহ তায়ালা স্বপ্নের মাধ্যমে জমজম কূপের সন্ধান দেন আবদুল মুত্তালিবকে (বইটা পড়লে টুইস্ট পাবেন এখানে) এবং একসময় জমজম কূপ আবিস্কার করেন কিন্তু আরবের কুরাইশ নেতারাও কুয়ার মালিকানা দাবি করে। এই বিষয়টা মীমাংসিত হয় এভাবে শামের এক বিচক্ষণ নারী জ্যাোতিষীর সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিবে।
.
নির্দিষ্ট দিনে সকল গোত্রের লোকবল নিয়ে শামের উদ্দেশ্য যাত্রা করে আবদুল মুত্তালিব ও তার সফরসঙ্গী দাস কায়েস। আব্দুল মুত্তালিবের মিত্রগোত্রের সাথীদের মুর্খতা, উটের অসুস্থতা, একসময় পথ হারিয়ে পানিশূণ্য হয়ে পড়ে সবাই অজানা মরুভূমিতে। ভবিষ্যৎ আশঙ্কা করে সবাই মৃত্যুর জন্য নিজের কবর খোঁড়া পর্যন্ত শুরু করে। কিন্তু আবদুল মুত্তালিবের উটের তলা থেকে অলৌকিকভাবে পানি বের হওয়া শুরু হলে সবাই বুঝতে পারে জমজমের মালিক একমাত্র আবদুল মুত্তালিব হবে এটা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা চান। যার ফলে কেউ আর আবদুল মুত্তালিবের বিরুদ্ধাচারণ করেনি।
.
৪.
জমজম কুয়ার কাজে ও শাম যাত্রায় মনিবের প্রতি কায়েসের অতিভক্তি মুগ্ধ করে আবদুল মুত্তালিবকে। তিনি কায়েসকে মুক্তি দান করেন দাসত্ব থেকে।
উমাইয়াকন্যা সাফিয়া ও আবদুল মুত্তালিবের চেষ্টায় একসময় তালহাও দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে শর্তসাপেক্ষে। আবদুল মুত্তালিব থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে কায়েস এবং জড়িয়ে যায় তালহার বোন হুমাইয়ার সাথে প্রণয়ে। হজের পরই তাদের বিয়ে সবকিছুই আগে থেকেই ঠিকঠাক হয়।
.
হজ মৌসুমে প্রত্যেক বছর মক্কায় বৃহৎ মেলার আয়োজন হয়, বসে কবিদের কবিতাপ্রতিভা দেখানোর সুযোগ। এই মেলাতে তালহা, হুমাইরা আর কায়েস এসেছিল এবং কারণবশত তালহা থেকে যায় মেলাতে। মেলা দেখে রাতে ফেরার পথে উমাইয়াপুত্র সুফিয়ানের আক্রমণে হুমাইরা আর কায়েস মারা যায়। মৃত্যুর পূর্বে তালহাকে হুমাইরা সুফিয়ানের নাম বলে যায়।
তালহা উমাইয়ার বাড়িতে গিয়ে সুফিয়ানকে হত্যা করে এবং সাফিয়াকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর ফলে তালহাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। সুফিয়ানকে হত্যার ফলে উমাইয়া তালহাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে তার বাবা-মা,দাদি ও ছোট ভাইকে পুড়িয়ে হত্যা করে। পরিবার হারিয়ে তালহা পাড়ি দেয় অজানার পথে….
.
৫.
পলাতক পথিক তালহা মক্কা থেকে পৌঁছে যায় সুদূর মাআরিবে। বিপদ থেকে রক্ষা করে পরিচয় হয় হামামার সহিত, হামামার চাচা আবরাহা মাআরিবের গভর্নর। আবরাহার শয়নে স্বপনে জাগরণে শুধুই ইয়েমেনের সম্রাট হওয়ার তীব্র লোভ।
আবরাহার স্বপ্নপূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে স্বয়ং তালহা। একসময় অন্যায়যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আবরাহা ইয়েমেনের সম্রাট হন এবং তালহাকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান দেয়। কিন্তু তালহাকে ধর্মদ্রোহী বলে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং বেদনাদায়ক শাস্তিস্বরুপ হাতের আঙুল কেটে নেয়।
.
সুদীর্ঘ ৫ বছরের কারাবাসের পর হামামার সহায়তায় কারাগার থেকে পালাতে সক্ষম হয় তালহা। কিন্তু পালাতে গিয়ে একসৈন্যের আক্রমণে রক্তাক্ত হয়ে তুবাইক পাহাড়ের নিচে পড়ে থাকে জীবন্মৃত হয়ে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে এক বেদুঈন পল্লীর সরদার শেইখ সামির এবং তার একমাত্র কন্যা মাইমুনা। সরদার কন্যার সেবাযত্নে তালহা সুস্থ হয়ে ওঠে। একসময় মাইমুনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় তালহা।
.
৬.
ইয়েমেনে সম্রাট আবরাহা অতিশয় এক গির্জা তৈরি করে মূলউদ্দেশ্য মক্কা ছেড়ে পৃথিবীর মানুষ তার এই গীর্জায় হজ পালন করবে। কিন্তু কাবার প্রতি মানুষের ভালোবাসার দরুন গীর্জায় আবরাহার ডাকে কেউ সারা দেয় নি। নব্য নির্মিত গীর্জায় মলত্যাগ করে কেউ এবং তালহারা আক্রমণ করে পালিয়ে যায়।
.
আবরাহা ধারণা করে মক্কার মানুষের এই কাজ। তখন বিশাল হস্তিবাহিনী নিয়ে মক্কার পথে যাত্রা করে কাবাঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। আবদুল মুত্তালিবের উট চারণভূমি থেকে চুরি হলে আবরাহা থেকে ফেরত নিয়ে বলেন, ‘কাবার মালিক কাবাকে রক্ষা করবেন’।
.
আবরাহার বাহিনী কাছাকাছি আসার আগেই মক্কার সমস্ত মানুষ একটি পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। হস্তীবাহিনী কাবা আক্রমণ করলে ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট ছোট আসমানি পাখিরা এসে পাথর নিক্ষেপ করে আবরাহার বাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়, আবরাহাসহ অনেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু একসময় সবাই মৃত্যুবরণ করেন।
.
তালহাকে দিয়ে উপন্যাসের সূচনা হয় আবার ইতি টানেন তালহাকে দিয়েই।
সাফিয়া তার স্বামীকে খুন করে পালানোর সময় তালহার সাথে দেখা হয়। দুজন পাড়ি দেয় নবজীবনের সন্ধানে…
.
.
উপন্যাসের লাস্ট দুটি লাইন তুলে ধরলাম–
“সুবহে সাদিকের সময় তালহা ও সাফিয়া ইয়াসরিবের উদ্দেশ্যে ঘোড়ায় চড়ে বসে। আর ঠিক তখনই আসমান ছিঁড়ে মা আমেনার কোলে নেমে আসে এক বেহেশতি শিশু”
.
(বিঃদ্র- “পিতামহ” পড়ার পর আপনার পছন্দসই একটা সীরাত পড়া বাধ্যতামূলক মনে করি। মাজিদা রিফার মহানবী(সা.) বেশ ভালো, পড়তেও উপন্যাসের মতো লাগে )
.
.
চরিত্রকথন-
.
১.
আবদুল মুত্তালিব সম্পর্কে বলার তো কিছুই নাই জাস্ট ওয়াও। প্রত্যেকটা গুণাবলি আবদুল মুত্তালিবে বিদ্যমান। একজন মানুষ কতটা মহৎ প্রকৃতির হতে পারে বুঝতে পারলাম।
.
২.
উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র তালহা। উপন্যাসের শুরু-শেষ হয়েছে তালহার মাধ্যমে । তালহা ও আবদুল মুত্তালিব সম্পর্কে জানতে উপন্যাসই শ্রেয়।
.
৩.
কায়েস চরিত্রটা খুবই ইন্টারেস্টিং লেগেছে আমার কাছে। হাসিখুশি,সাহসী কিন্তু জীবনে লুকিয়ে আছে বেদনাময় কাব্য। কিন্তু তার শেষ পরিণতিটা বেদনাদায়ক।
.
৪.
সামিরা বিনতে জুন্দুব অর্থাৎ আবদুল মুত্তালিবের ১ম স্ত্রী। কঠিনতম সময়ে স্বামীকে সহায়তা করায় তার তুলনা হয়না।
.
৫.
উমাইয়াকন্যা সাফিয়া চরিত্রটা কোমলপ্রাণ। তালহার দাসত্বের সময় সবচেয়ে হেল্প করেছে সাফিয়া। যাই হোক সাফিয়াকে উপন্যাসে ডুবেই খুঁজে নিলেই ভালো হবে।
.
৬.
হুমাইরা,হামামা, মাইমুনা, ফাতেমা চরিত্রগুলো নজর করা।
হামামা ছিল সম্রাট আবরাহার ভাতিজি ভাগ্যক্রমে সে একসময় হয় মক্কার দাসী। একসময় তার গর্ভে জন্ম নেয় ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বিলাল(রা.)।
.
হুমাইরা হলো তালহার বোন। মাইমুনা হল বেদুইন সরদারকন্যা এবং তালহার স্ত্রী। তার পরিণতি ছিল গর্ভাবস্থায় মৃত্যু।
.
ইয়াসরিবে ফাতেমার সেবায় মৃত্যু থেকে তালহা বেঁচে ফিরে তালহা। ফাতেমা চরিত্রটাও দারুণ।
.
আরো অনেক চরিত্র আছে জানতে পারেন “পিতামহ” এ ডুব দিয়ে।☺
.
.
অগোছালোকথা
.
উপন্যাসের সবচেয়ে আর্কষণীয় চরিত্র তালহা। লেখকের লেখার জাদুতে তালহাকে সমস্ত আবেগ ঢেলে চিত্রিত করেছেন।
“সুখ সে তো ক্ষণিকের জন্য আসে দুঃখই যেন চিরসাথী”
এই কথাটি তালহার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তালহা চরিত্রটাই সবার মনে দাগ কাটবে।
.
“যে জীবন ফরিঙের” ও “সিদরাতুল মুনতাহার হলুদ পাতারা” পর্বটা পড়ার সময় বিষন্নতায় ছুঁয়ে যায় মন।
.
“কুমারিত্বের পরিক্ষা” পর্বটা পড়ে হাসতে হাসতে শেষ।😂 এই জন্যই তো যুগটারে অন্ধকারাচ্ছন্ন জাহেলিয়াত বলে।
.
.
সাব্বির জাদিদের চমৎকার বর্ণনা আর চরিত্রচিত্রণ খুবই নান্দনিক। বেশি কিছু বলবো না শুধু বলে রাখি লেখকের এই বইটার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাকে মনে রাখবে আজীবন।
.
.
সমালোচনা নহে অভিমত
.
১.
আবরাহার মক্কা আক্রমণের বর্ণনা একটু সময় নিয়ে শেষ করতে পারতেন। তাড়াহুড়ো করেছেন মনে হয়েছে।
.
২.
মাইমুনা-তালহার মিলনের বর্ণনাটা একটু দৃষ্টিকটু লাগল।
.
৩.
” অন্ধ উনাইসের ভিক্ষাবৃত্তির ঘটনা নবি মুহাম্মাদের স্ত্রী আয়েশা আমাদের জানাবেন ”
এই বাক্যে দরূদ শরীফ লেখা এবং আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার নাম নেয়া উচিত ছিল। নেক্সট সংস্করণে ঠিক করার অনুরোধ রইল লেখকের প্রতি।
.
পরিশেষে “পিতামহ”কে স্বয়ং বিচার করুন প্রিয় পাঠক।
.
বইয়ের নামঃ পিতামহ
লেখকঃ সাব্বির জাদিদ
প্রকাশনীঃ ঐতিহ্য
প্রকাশঃ২০ বইমেলা
প্রচ্ছদ মূল্যঃ ৮০০ টাকা
পৃষ্ঠাঃ ৫২৪
প্রচ্ছদ-কাজী যুবাইর মাহমুদ