এই দুনিয়া মরীচিকার। দু-দিনের। এক রঙিন স্বপ্নের নাম। ক্ষণস্থায়ী জীবন। দু-দিনের এই দুনিয়া নিয়ে মানুষ আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখে। জীবনের স্বপ্ন পূরণে ছুটে চলে প্রান্তর থেকে প্রান্তরে। তবুও স্বপ্ন পূরণ হয় না। ক্রমেই দুনিয়া নিয়ে হতাশা বাড়তে থাকে। কারণ দুনিয়া কখনো মানুষের সব স্বপ্ন পূরণ করে না। একদিন জীবনের সুতোয় টান পড়ে। উপক্রম হয় জীবন বাতি নিভে যাওয়ার। ওপারে পাড়ি জমানোর সময় চলে আসে। মৃত্যুর বিছানাতে এই ধূসর দুনিয়া নিয়ে আফসোস হয়। কিন্তু! সেদিনের শত আফসোস কোনো কাজে আসে না।
দুনিয়া হলো পরজনমের পাথেয় অর্জনের একমাত্র স্থান। এখান থেকেই পরকালের পাথেয় জোগাতে হবে। দুনিয়ার যশ-খ্যাতি, সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব কষতেই কেটে যায় আমাদের দিন-রাত্রিগুলো। দিকভোলা হয়ে এই দুনিয়াতে আমরা হেঁটে চলছি। দুনিয়ার রূপ-রস, গন্ধে আমরা ভুলে যাই পরজনমের পাথেয় সংগ্রহ করার কথা। ধূসর দুনিয়ার মোহের হাতছানিতে আমরা ভুলে যাই রবকে। আখিরাতকে।
দুনিয়া কী? দুনিয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? এখানে মানুষ কেন আসে? আবার কেনই-বা কদিন পরে চলে যেতে হয়? আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম এবং সালাফগণ দুনিয়াকে কোন চোখে দেখতেন? তারা দুনিয়ার মোহ থেকে বেঁচে থেকে কীভাবে যুহুদ অবলম্বন করতেন; এ বিষয়টি নিয়েই তৃতীয় হিজরি শতকের প্রসিদ্ধ সালাফ ইমাম ইবনু আবিদ দুনিয়া রহিমাহুল্লাহু রচনা করেছেন কিতাবুয যুহুদ নামক একটি পুস্তিকা। তারই অনূদিত রূপ—সালাফদের চোখে দুনিয়া।
Copyright © 2024 Seanpublication.com
আব্দুর রহমান –
সালাফগণ দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে কত সাধারণ ভাবেই না জীবনযাপন করেছেন। জীবনের শত কষ্ট ও ঘাত-প্রতিঘাতের পরও তারা আল্লাহর ইবাদত করা থেকে পিছপা হননি। যাদের কাজকর্ম, জীবনযাপন সবটাই ছিল আখিরাত কেন্দ্রিক। সালাফগণ জানতেন পরকালে শান্তিময় জীবন পেতে হলে দুনিয়ার জীবনে ক্ষণিকের আরাম আয়েশ, ভোগ-বিলাসে মত্ত জীবন যাপনের কিছুই কাজে আসবে না।
.
অথচ এর বিপরীতে বর্তমান মুসলিম সমাজ অবাধ স্বাধীনতা ও তথ্য প্রবাহের এই যুগে ইসলামের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে ব্যর্থ। তাদেরকে আজ পেয়ে বসেছে সমাজের অশ্লীলতা, অন্ধ গোড়ামী, সহ নানা রকম ইস্যু। অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে সুদ, ঘুষ, খুন, রাহাজানি ইত্যাদির সাথে। যেকোনো ভাবেই হোক আজ মানুষকে যেন সম্পদ আহরণ করতেই হবে।
.
আর তাইতো সালাফদের দুনিয়ার জীবন কেমন ছিল, দুনিয়ায় তাদের আচার আচরণ ও কর্মপন্থাই বা কিরুপ ছিল সেই আলোকে লেখা একটি অন্যতম বই হলো “কিতাবুয যুহদ্”। যাতে আপনি পাবেন সালাফদের দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি এবং আখিরাতের প্রতি আসক্তি বিষয়ক অনেক অমূল্য বাণী। বইটি লিখেছেন ইমাম ইবনু আবিদ দুনিয়া রহিমাহুল্লাহ। যিনি তৃতীয় হিজরী শতকের একজন প্রসিদ্ধ সালাফ।
বইটির অনুবাদ করেছেন প্রখ্যাত অনুবাদক সাইফুল্লাহ আল মাহমুদ। বাংলায় অনুদিত নাম “সালাফদের চোখে দুনিয়া”।
.
➤ সার-সংক্ষেপঃ-
‘যুহদ্’ শব্দের আভিধানিক অর্থ “দুনিয়া-বিরাগ”। বইটিতে সালাফদের দুনিয়া সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে লেখক ২০ টি অধায়ে বিভক্ত করে আলোচনা করেছেন। যাদের কাজকর্ম, জীবনযাপন সবটাই ছিল আখিরাত কেন্দ্রিক। সালাফগণ জানতেন পরকালে শান্তিময় জীবন পেতে হলে দুনিয়ার জীবনে ক্ষণিকের আরাম আয়েশ, ভোগ-বিলাসে মত্ত জীবন যাপনের কিছুই কাজে আসবে না।
যেমন প্রসিদ্ধ একজন সালাফ ওয়াহাব ইবনু মুনাব্বিহ রহিমাহুল্লাহ বলেন- দ্বীনের সবচেয়ে প্রিয় স্বভাব হলো দুনিয়াবিমুখতা। আর সবচেয়ে অপ্রিয় স্বভাব হলো প্রবৃত্তির তাড়নায় সাড়া দেওয়া।
আবু হাযিম রহিমাহুল্লাহ বলেন যে ব্যক্তি দুনিয়ার ব্যাপারে জানে, সে কখনো দুনিয়ার সুখ পেয়ে আনন্দিত হয় না। আবার সামান্য দূঃখে মুষড়ে পড়ে না।
এভাবে সালাফদের দুনিয়া সংক্রান্ত অসংখ্য কথামালার সাহায্যে সাজানো হয়েছে বইটিকে।
এছাড়া সালাফগণের রচিত বেশকিছু কবিতাও বইতে স্থান পেয়েছে। অনুবাদের সময় অনুবাদকও সালাফদের সেই কাব্যিক ছন্দ ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি মূল আরবি কবিতাটিও উল্লেখ করে দিয়েছেন।
.
➤ বইটি কেন পড়বেনঃ-
১। আপনি যদি দুনিয়ার চিন্তায় সারাক্ষন ব্যস্ত থাকেন। দুনিয়ায় ব্যস্ততায় আল্লাহর ইবাদত করার মত সময় পাচ্ছেন না। তাহলে বইটি একবার হলেও পড়ুন। জানতে পারবেন সালাফগণ কত সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। কিন্তু তারপরও তারা আল্লাহর ইবাদত করা থেকে পিছপা হননি।
২। বইটি এ জন্য পড়বেন যে বইতে পাবেন সালাফদের দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি এবং আখিরাতের প্রতি আসক্তি বিষয়ক অনেক অমূল্য বাণী।
৩। আপনার জন্য বইটি হতে পারে সালাফদের যুহদ সম্পর্কে জানার এবং তাদের আদর্শ জীবনে বাস্তবায়ন করার এক অনন্য মাধ্যম।
.
➤ ব্যক্তিগত অনূভুতিঃ-
সালাফদের চোখে দুনিয়া বইটি এক কথায় অসাধারন। বইটি পড়ার পর বুঝতে পেরেছি সালাফদের দুনিয়ার জীবন কেমন ছিল। তাদের আচার আচরণ ও কর্মপন্থা সম্পর্কে। যা আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
বইটি পড়ার সময় পাঠকের চিন্তায় ভেসে উঠবে দুনিয়ায় আমরা কি করছি? কেনইবা করছি? আখিরাতের অনন্ত জীবনের জন্যই বা কি করেছি? কল্পনায় ভেসে উঠবে সালাফদের সেই সময়ের ইমানদীপ্ত মুহুর্তগুলো।
সব মিলিয়ে বইটি খুবই ভালো এবং উপকারী। তাই সকল পাঠকের প্রতি অনুরোধ বইটি একবার হলেও পড়ুন আর জীবনকে রাঙিয়ে তুলুন সালাফদের জীবন ও আদর্শের আলোকে।
.
➤ সমালোচনাঃ-
বইতে সমালোচনা করার মত তেমন কিছু নেই। প্রথম সংস্করণ হিসেবে বানান বিভ্রাট বা মুদ্রণত্রুটি খুব বেশি চোখে পড়েনি। এদিক থেকে প্রকাশনী প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তবে বইতে সালাফদের বানীগুলো রেফারেন্স সহকারে দেয়া থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সেগুলোর রেফারেন্স দেয়া হয়নি।
.
➤ শেষ কথাঃ-
এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বই পাঠকের হাতে পৌছে দেয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলা বইটির সাথে জড়িত লেখক, প্রকাশক, অনুবাদক সহ সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করুন। এ কাজে বারাকাহ দিন এবং আমাদের সবাইকে আখিরাতের সাফল্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে দুনিয়ার জীবনে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন।