Copyright © 2024 Seanpublication.com
শতাব্দীর চিঠি (হার্ডকভার)
- লেখক : মুসা আল হাফিজ
- পাবলিকেশন : ফোয়ারা
- বিষয় : ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সকল প্রকাশক
Author : মুসা আল হাফিজ
Publisher : ফোয়ারা
Category : ইতিহাস
৳220 ৳132
You Save TK. 88 (40%)
শতাব্দীর চিঠি (হার্ডকভার)
Share This Book:
ক্যাশ অন ডেলিভারী
৭ দিনের মধ্যে রিটার্ন
ডেলিভারী চার্জ ৬০ টাকা থেকে শুরু
Author
Reviews (1)
1 review for শতাব্দীর চিঠি (হার্ডকভার)
Add a review Cancel reply
সাওদা সিদ্দিকা নূর –
বাংলার পরিচয় বহনকারী এই বাক্য দু’টো আমাদের ঠোঁটের আগায় থাকলেও ভেতরে যে মোটেও অনুভব করতে পারিনি, সেটা বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতাই প্রমান দেয়।
আজ আমরা ইউরোপের উত্থান পতনের ইতিহাস গড়গড়িয়ে উগরে দিতে পারি। কিন্তু যদি বাঙালির ইতিহাস জিজ্ঞেস করা হয়, তবে সেটা সর্বোচ্চ পলাশির প্রান্তর থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত গিয়ে থামবে। এর বেশি হবে না। অথচ আমাদের আছে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস, একটি সোনালি অতীত। সোনালি অতীতে আছে সোনারাঙা ইমানি চেতনায় জ্বলজ্বল করা কিছু নক্ষত্র মানব। যাদের জন্য এই দেশ শিক্ষা, অর্থ ও ইনসাফের বিচারব্যবস্থায় ছিল সবথেকে উন্নত। এই দেশ হয়েছিল পীর আওলিয়াগনের পূণ্যভূমি।
কিন্তু আমরা তা জানি না। জানি না আমাদের শেকড়ের গভীরতা। তাই একটি শেকড়ভুলো জাতিকে তার গৌরব গাঁথা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিতে মুসা আল হাফিজের অনন্য প্রয়াস হচ্ছে ‘শতাব্দীর চিঠি’।
.
.
◾এক নজরে বই পরিচয়:
নাম: শতাব্দীর চিঠি
লেখক: মুসা আল হাফিজ
প্রকাশনায়: ফোয়ারা প্রকাশনী
পৃষ্ঠা: ৯৬
মুদ্রিত মূল্য: ২২০টাকা
প্রকাশকাল: ২০১৯ বই মেলা
.
.
◾লেখক পরিচিতি:
মুসা আল হফিজ এমন একজন মানুষ যাকে একাধিক বিশেষণে বিশেষায়িত করা সম্ভব। তিনি একাধারে একজন ইসলামি স্কলার, কবি, বক্তা, সুলেখক ও গবেষক। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় লিখেছেন অনন্য কিছু বই। লেখকের একাডেমিক অর্জন, সাহিত্য অঙ্গনে রুচিশীল বিচরণ ও বইয়ের শেষের গ্রন্থপঞ্জি বইটির অথেনটিক মান সম্পর্কে ধারণা দেয়। তাই ‘শতাব্দীর চিঠি’ বইয়ের অথেনটিন মান নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
.
.
◾বইয়ের নামকরণ ও আমার ভাবনা:
শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে গিয়েছে, ইতিহাসের কিছু পাতায় ধুলোর আস্তরণে ঢাকা পড়েছে একজন কিংবদন্তির নাম। রুপকথার গল্পের মত তিনি আমিরের পরিবারে জন্ম নিয়ে ফকিরের জীবন গ্রহন করেছিলেন।
আমরা আজ না জানি তাঁর নাম, না জানি তাঁর বংশপরিচয় ও জীবনী। অথচ তিনি তাঁর সবটুকু আমাদের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন।
সেই মানুষটিকে শতবর্ষ পর আবার নতুন করে আমাদের মাঝে তুলে ধরতে চেয়েছেন লেখক। তাঁর কাছে পৌঁছাবে না, তারপরও শতাব্দীর পর লিখে গিয়েছেন একখানা আবেগি উন্মুক্ত চিঠি। আর এজন্যই হয়ত বইয়ের নাম হয়েছে ‘শতাব্দীর চিঠি’। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক এটাই বলে। জানি না, লেখকের মনে কী রয়েছে।
.
.
◾বই কথন:
একজন মানুষ।
যার ঈমানের ঘাটি ছিল লোভ, ললসা, প্রতিহিংসা পরায়নতার উর্ধ্বে। জাগতিক চাওয়া-পাওয়া বলতে ছিল শুধু পরোপকার। তিনি কোন সাধু-সন্ন্যাসি ছিলেন না। না ছিলেন লোকরঞ্জনে উৎসাহী। রাজনৈতিক ক্ষমতার তিল পরিমাণ লোভ ছিল না। কিন্তু দেশের ও দশের প্রয়োজনে যেকোনো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সিদ্ধান্তে সাবার প্রথমে অগ্রসর ছিলেন। যখন রাষ্ট্রে কোন অন্যায় হতো, তিনি প্রজার স্থানে থেকে রাজাকে শাষণ করতেন।
তিনি ধর্মীয় গোড়া ছিলেন না। কুরআন ও হাদিস থেকে যা কিছু সহিহ, তা সবই গ্রহণ করতেন। ছাত্রদের আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও দুনিয়াবি উভয় শিক্ষা দিয়েছেন।
কিন্তু কে এই মানব? তাকে শুধুমাত্র মানব বললে ভুল হবে। তিনি একজন কিংবদন্তি। তিনি নুর কুতুব আলম (রহি.)। যিনি বাংলার ক্রান্তি লগ্নে দেশকে রক্ষার জন্য নিজের সবটুকু নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁর সম্পর্কে জানতে হলে, পড়তে হবে এই মণিমুক্তা খচিত বইটি।
তাছাড়া বাংলার ইতিহাসের আরো কিছু আলোক উজ্জ্বল নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে এই বইয়ে। পাওয়া যাবে এমন সব মুসলিম শাষক ও তাঁদের শাষণ আমলের কথা, যখন রাজার বিরুদ্ধে বিধবা কাজীর দরবারে অভিযোগ তুলতে পারত।
যখন বাংলায় আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা ঘটত, ঠিক তখনই এইসকল মুসলিম শাষকদের আবির্ভাব হয়েছিল। ইসলামের আলোক বিচ্ছুরণের মাধ্যমে জয় করে নিয়েছিল বাংলা। শুরু হয়েছিল, গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু ও পুকুর ভরা মাছের যুগ। তখন শিক্ষাব্যবস্থা এতটাই উন্নত হয়েছিল যে, এদেশের শিক্ষকরা শুধুমাত্র নিজেদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করে থেমে থাকেননি। তারা সুদূর আরবেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছেন।
মুসলিমদের এই সাফল্য তখন মনুবাদীদের মনে ধরল না। গোপন চক্রান্ত করে দেশে শুরু করল মুসলিম নিধনের মহাযজ্ঞ। কি শাষক, কি প্রজা? সবাই হলো বলি। মসজিদে হলো মূর্তি নির্মান। বন্ধ হলো আযানের ধ্বনি। এভাবে চলল আরো বহু বছর। শশাঙ্ক, সেনদের অত্যাচারে অতিষ্ট হলো দেশ।
এরপর আবার ঘোর অমানিশা ভেদ করে আস্তে আস্তে দেখা দিল দিনমণির রক্তিম আভা। মুসলিমদের রক্ষার জন্য সেই কিংবদন্তি লিখলেন একটি চিঠি। দুর দেশ থেকে আসল একদল কালিমার পতাকাবাহী অশ্ব। কিন্তু কোনো এক কারণে কোনো রক্তপাত ছাড়াই জয় পেল মুসলিমরা। কিন্তু কী সেই কারণ?
সেটা না হয়, আপনাদের জন্য রেখে দিলাম। বইটি পড়ে নিজেরাই এই রহস্য উদ্ধার করবেন।
.
.
◾পছন্দের উক্তি:
বইয়ের এত এত পছন্দের বাক্যগুলো স্মরণ রাখা দুঃসাধ্য কাজ। তবে এই দুঃসাধ্য কাজেকে একটু হলেও আঞ্জাম দিয়েছি। বইয়ের সবথেকে পছন্দের উক্তি হলো,
১. নিজেকে কারো চেয়ে অভিজাত ভাবতে নেই। সম্মানিত পিতার সন্তান হলেই তুমি সম্মানিত নও।
২. ‘ব্যক্তিগত হারানো বলতে আমাদের কোনো হারানো নেই। আমাদের হারানো সেটাই, যেটা হারায় আমাদের জাতি।’- আবু তাওয়ামা (র.)
.
.
◾পাঠ্যানুভূতি:
এই বইটি পড়ে আমার ভেতর অনুভূতির যে অনুরণ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কখনো আক্ষরিক রুপ দেয়া সম্ভব নয়। কারণ, অনুভূতিকে আক্ষরিক রুপ দেয়ার মত কোনো শব্দ পৃথিবীর কোনো অভিধানে নেই। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু বর্ণ, কিছু শব্দ দ্বারা এলোমেলো ভাবে উপস্থাপনার চেষ্টা কে-না করে? আমিও না-হয় করলাম।
আসলে কিছু কিছু বই মানুষকে আফসোসের সাগরে ভাসায়, আবার কিছু কিছু বই আমাদের গৌরবান্বিত করে, বিস্মিত করে, কিছু বই কাঁদায়। আর ‘শতাব্দীর চিঠি’ এমনই একটি বই, যেখানে এই সবগুলোর সমন্বয় ঘটেছে। যখন মুসলিমদের বিজয় গাঁথা শুনেছি, গর্বে প্রাণ ভরে গিয়েছে। কিন্তু যখন ভেবেছি, আমি এই সকল বীর মুজাহিদদের সম্পর্কে কিছুই জানতাম না, তখন আফসোস হয়েছে। দুনিয়া বিমুখ সাধারণ মানুষগুলো যখন দেশকে রক্ষা করেছে, শাষকদের শাষণ করেছে, তখন বিস্মিত হয়েছি। যখন দেখেছি মনুবাদী চক্রগুলো নির্মম ভাবে মুসলিম নিধন করেছে তখন কেঁদেছি।
এককথায় একটি মাস্টারপিস বই।
.
.
◾ইতিবাচক ও নেতিবাচক মন্তব্য:
১. আমি ইতিহাসের নতুন পাঠক। আমার জন্য সল্প কলেবরে বড় মেসেজ দেয়া বইগুলো অগ্রাধিকার পায়। কিন্তু যারা একটু ধৈর্যশীল পাঠক এবং খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে পছন্দ করেন, তাদের জন্য উপযোগী নয়।
২. বইটি খুব আবেগি ভাষায় লেখা। যেকোনো ধরণের পাঠক এমন বই পছন্দ করবেন। কিন্তু বইয়ে আবেগ প্রকাশ করতে যেয়ে অনেক কঠিন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেটা আমার কাছে দূর্বোধ্য মনে হয়েছে।
৩. বড় বড় ঘটনাগুলোকে খুব বেশি সল্প ভাবে তুলে ধরার কারণে পূর্ণ তৃপ্তি পাইনি।
.
.
◾কেন পড়তে হবে বইটি?
ছোট্ট কলেবরে বিশাল রত্ন ভান্ডার এই বই। না পড়লে নিজেদের গর্ব করার মত কিছু ঘটনা থেকে বঞ্চিত হব। তাই বইটি অবশ্য পাঠ্য।
.
.
◾পরিশেষে:
আমি মনে করি, যে জাতি তার ইতিহাস জানে না, জানে না তার পূর্ব পুরুষদের অভাবনীয় সাফল্যের কথা, সে জাতি কখনোই নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারে না। তাই অন্তত নিজেদের টিকিয়ে রাখতে হলেও আমাদের পূর্ব পুরুষদের ইমানি জজবা কেমন ছিল জানতে হবে, জানতে হবে তাদের জীবনচরিত। সেজন্য ‘শতাব্দীর চিঠি’ একটা অসাধারণ বই। সম্মানিত লেখকের কাছ থেকে এমন আরো বই পাঠক প্রত্যাশা করছে।