কী পড়বেন কীভাবে পড়বেন (হার্ডকভার)

রিভিউ
.
বই: কী পড়বেন কীভাবে পড়বেন
লেখক: শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
.
যেকোনো কাজের মতো পড়ার মাঝেও আছে শিল্প, সৌন্দর্য ও বিশেষ কানুন। উদ্দেশ্যহীন, এলোমেলো পড়ায় খুব একটা লাভ হয় না। আমরা নিজেদের মন-মর্জি অনুসারে পড়ি; কোনো নিয়ম ও শৃঙ্খলার ধার ধারি না। ফলে, আমাদের অধ্যয়ন তেমন ফলপ্রসু হয় না। সঠিক পদ্ধতিতে পড়ার উপায় নিয়ে আরবের প্রথিতযশা আলিম শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) একটি চমৎকার কিতাব রচনা করেছেন। ইসলামি বইয়ের পাঠকশ্রেণির জন্য বইটি মূল্যবান এক তোহফা।
.
❖ বিষয়বস্তু ও পর্যালোচনা:
আমরা জানি, বইয়ের বিভিন্ন ধরন ও ক্যাটাগরি থাকে। সম্মানিত লেখক তাঁর এই গ্রন্থের শুরুতে সেগুলো একে একে তুলে ধরেছেন। বই কেন পড়বো, এই প্রশ্নের সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। আমাদের অনেকেই (পিডিএফ/হার্ডকপি) বই সংগ্রহ করেন প্রচুর, কিন্তু পড়েন যৎসামান্য। বিশেষত অতিমাত্রায় অনলাইননির্ভর এই জামানায় পড়ার প্রতি অনেকের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। লেখক এর কারণ খুঁজেছেন এবং এই অনীহার প্রতিকার কীভাবে করতে হবে, সে সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন। এরপর তিনি পড়া সঠিকভাবে শুরু করার পদ্ধতি তুলে ধরেছেন। এই আলোচনাটি বইয়ের মূল অংশ। নিঃসন্দেহে টপিক হিসেবও এটি অগ্রাধিকার পাওয়ার মতো। তাই, লেখক প্রায় ৫৫ পৃষ্ঠাব্যাপী এই আলোচনা করেছেন। এতে দ্বিনি কিতাবাদি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে ক্রম অনুসরণ করা ও অগ্রাধিকার ঠিক করার প্রতি ফোকাস করেছেন। বিভিন্ন শাস্ত্রের উপর প্রাথমিক লেভেলের বইগুলো পড়তে সাজেস্ট করেছেন। এছাড়া সেল্ফ-স্টাডির মাধ্যমে নিজের ‘ইলমকে সমৃদ্ধ করার জন্য আকিদা, তাফসির, উলুমুল হাদিস, ফিকহ, সিরাত, অভিধান, আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কিতাবের নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি বই সংগ্রহ ও ক্রয়ের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। পাশাপাশি, ব্যক্তিগত পাঠাগার তৈরি ও এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে সুন্দর আলোচনা করেছেন। এরপর বই ধার দেওয়ার আদব নিয়ে সালাফদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। শেষে পিডিএফ ভার্সনের বইয়ের উপর কিছু কথা বলে বইটি শেষ করেছেন।
.
❖ বইটির বিশেষত্ব:
১) বইটি পড়ার মাধ্যমে আপনার সামনে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন হবে—বইয়ের দিগন্ত, অধ্যয়নের দিগন্ত—যা পূর্বে জানতেন না।
২) বই পড়াকেন্দ্রিক যত ধরনের সমস্যা আপনি ফেইস করছেন, তার বেশিরভাগের সমাধান পাবেন, ইনশাআল্লাহ।
৩) পড়াকেন্দ্রিক সালাফদের দৃষ্টিভঙ্গি, তাঁদের সাধনা, অধ্যবসায়, তাঁদের পড়ার পদ্ধতি ও দিক-নির্দেশনা জানতে পারবেন।
৪) অসংখ্য বইয়ের ভীড়ে কোন্ বইগুলো পড়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেবেন এবং কোন্ ধরনের বইয়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন, সে ব্যাপারে সুন্দর পরামর্শ পাবেন।
৫) পড়ার ক্ষেত্রে অনীহা এবং অমনোযোগ দূর করার জন্য অনেকগুলো ফলপ্রসু উপায় খুঁজে পাবেন।
.
❖ কিছু নেতিবাচক দিক:
১) রঙিন কাগজ এবং পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় বিভিন্ন বইয়ের ছবি দিয়ে বইটিকে শিশুতোষ করে ফেলা হয়েছে, যা বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়।
২) বইটির পৃষ্ঠা বাড়িয়ে বড় করার একটি প্রবণতা লক্ষ করা গেছে, যা কাম্য নয়।
৩) বানান ভুলের পরিমাণ অনেক। সম্ভবত কোনো সম্পাদনা হয়নি। বানানে এত পরিমাণ ভুল ক্ষমাযোগ্য নয়। (সর্বশেষ সংস্করণে এসবের সংশোধনী এসেছে কীনা আমার জানা নেই)
.
তবে, সম্মানিত অনুবাদক আবদুল্লাহ আল মাসউদ ভাই অনুবাদে সুপরিচিত। তিনি অনুবাদ খুব ভালো করেছেন। বেশ গুছিয়ে, পয়েন্ট আকারে বইটি সাজিয়েছেন। কাগজের মান এবং প্রচ্ছদ বেশ ভালো। গুরুত্বের বিচারে এমন একটি বই প্রত্যেক পাঠকের সংগ্রহে থাকা উচিত।