আস্তিক-নাস্তিক বিতর্কের আনুষ্ঠানিক শুরু অনেকটা ব্লগকেন্দ্রিক। মাঠ পর্যায়ে এটার ইফেক্ট অনেক দেরিতে পড়লেও এ দ্বন্দ্ব নতুন নয়। ব্লগপাড়ায় এ নিয়ে দেন-দরবার চলে আসছিল অনেক আগে থেকেই।
তখনো শাহবাগ জাগেনি। তখনো হেফাজত মাঠে নামেনি। দুহাজার নয়/দশ-এর কথা। বাংলা ব্লগপাড়া মাঝেমাঝেই উত্তপ্ত হয়ে উঠত আস্তিক-নাস্তিক দ্বন্দ্বে। কথা হতো, তর্ক হতো, বিতর্ক হতো। তেমনই একটি তুলনামূলক শালীন বিতর্কের কাগুজে প্রকাশনা ‘জ্ঞান বিজ্ঞান অজ্ঞান।
এ বইয়ের লেখক রশীদ জামীল একজন ব্লগার ছিলেন। কুরআন এবং বিজ্ঞান নিয়ে তিন পর্বের ধারাবাহিক একটি লেখা ছিল তার। লেখাটিকে কেন্দ্র করে অ্যান্টি ইসলাম ব্লগাররা ঝাঁপিয়ে পড়ল লেখকের ওপর। পুরো পাঁচদিন পাঁচরাত ধরে চলতে থাকল এই বিতর্ক। পুরো ব্লগপাড়ার চোখ ছিল এদিকে। জয়-পরাজয়ের ব্যাপার ছিল না; কিন্তু অবচৈতনিক একধরনের প্রতিযোগিতা ছিল। ফলাফল… জ্ঞান বিজ্ঞান অজ্ঞান।
Md Amdadullah Tafhim –
বইঃ জ্ঞান বিজ্ঞান অজ্ঞান
লেখকঃ রশীদ জামিল
■ প্রাক-কথনঃ
———————
আস্তিক নাস্তিক দ্বন্দ্ব আবহমানকাল ধরেই চলছে। যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস রাখে না তাদের বলা হয় নাস্তিক। কিছু ক্ষেত্রে কুচক্রী মহল ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে, আল্লাহ ও নবীজির (স) ব্যাপারে ইচ্ছেপূর্বক অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তুলে কেবল ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য। তাদেরকে নাস্তিক না বলে সুকৌশলী ইসলাম বিদ্বেষী বলা চলে। নাস্তিক হোক কিংবা সুকৌশলী ইসলাম বিদ্বেষীই হোক, তাদের প্রশ্ন উত্থাপন, জিজ্ঞাসা ও জবাব, তর্ক-বিতর্ক কিংবা কু-তর্কের এক যুগান্তকারী মাধ্যম বিভিন্ন ব্লগগুলো।
মাঝেমধ্যেই বাংলা ব্লগগুলো উত্তপ্ত হয় আস্তিক-নাস্তিক দ্বন্দ্বে। কথা বার্তা হয় , তর্ক-বিতর্ক হয়। যুক্তির যৌক্তিক তর্কে ইসলামিস্ট বা এন্টি-ইসলামিস্ট তার্কিকদের মধ্যে জমে উঠে বিভিন্ন প্রসঙ্গ। তেমনি একটি প্রসঙ্গ “কুরআন ও বিজ্ঞান” শীর্ষক আলোচনায় পক্ষ ও বিপক্ষের তুলনামূলক শালীন বিতর্কের মলাটবদ্ধ কাগুজে প্রকাশনা ‘জ্ঞান বিজ্ঞান অজ্ঞান’ বইটি।
■ বিষয়বস্তুর নিরিখে বই-আলাপনঃ
————————————————-
লেখক ‘রশীদ জামিল’ এর ‘কুরআন ও বিজ্ঞান’ শীর্ষক তিন পর্বের লিখা ছিল ব্লগে। লিখাটি নিয়েই উত্তপ্ত হয়ে উঠে ব্লগপারা। সমগ্র ব্লগপারার শিক্ষানবিশ চাক্ষুষ দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে কেবল এইদিকে ই। টানা পাচঁদিনে চলা সকল বিতর্কের সামষ্টিক রুপ এই বইটি।
বইটিকে মুটামুটি চারভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম অংশে লেখক ‘পবিত্র কুরআনে বিজ্ঞানের মূল উপাদান গাণিতিক ফর্মুলার স্বার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। বিগ ব্যাং তত্ত্বের সাথে পবিত্র কুরআনের সামঞ্জস্যতার যৌক্তিক ও দালিলিক জবাব দিয়ে শেষ হয়েছে প্রথম অংশ।
দ্বিতীয় অংশে আলোচনা হয়েছে বিগ ক্রাঞ্চ নিয়ে। পাশাপাশি উঠে এসেছে ডার্ক এনার্জি,ডার্ক ম্যাটার,হাইলি আনলাইকলি তথা কিছু সূত্র, কিছু ধারণা, কিছু সম্ভাবনা, সেই সাথে কিছু কারণ ও কার্যকারণও।
পরবর্তী অংশে আলোচিত হয়েছে ‘কুরআনে বিবৃত এমন কিছু ব্যাপারে যেগুলো সমসাময়িক বিজ্ঞানের উৎকর্ষে স্থান দখল করেছে। ওয়ার্ল্ড ফেমাস কিছু চমকপ্রদ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, জিনতত্ত্ব, ডিএনএ, ফিজিক্স,মাধ্যাকর্ষ,আকাশযান, বেতার, টেলিভিশন আইডিয়ার ব্যাপারে। সবশেষে, লেখাটিকে পূর্ণতা দিয়েছেন বেশকিছু আস্তাশীল মুসলিমের মন্তব্য দিয়ে।
■ কাদের জন্য এবং কেন পড়বেন?
———————————————-
শিক্ষানবিশ, বিজ্ঞানমনস্ক, জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ফারাক ও সীমাবদ্ধতায় চাক্ষুষ দৃষ্টিসসম্পন্ন,যৌক্তিক ও দালিলিক অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী প্রত্যেক ব্যক্তি জন্য বইটি হাইলি রিকমেন্ডেড। এছাড়াও প্রত্যেক পাঠক বইটি থেকে কুরআনে বৈজ্ঞানিক বিষয়ের সুনিপুণ বর্ণনায় মুগ্ধ হবে।
বইটি পড়লে জানা যাবে অবিশ্বাসী-নাস্তিক জনগোষ্ঠীর উত্থাপিত প্রশ্নের ধরণ, জ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে। এছাড়াও কিছু স্পেসিফিক বিষয়ে তাদের টার্গেট সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা যাবে। নাস্তিকদের প্রত্যেকটি প্রশ্নের যথোপযুক্ত ও মুন্সিয়ানা জবাব এবং পাল্টা প্রশ্ন ও তার ধরণেলেখকের দক্ষতা ও কৌশল পাঠককে অদ্ভুত প্রেরণা ও উদ্দীপনা যোগাবে।
■ ভাললাগা বিষয়াবলীঃ
———————————-
একটি বই সুখপাঠ্য হয়ে পাঠকের হৃদয়কে আলোড়িত করতে কয়েকটি বিষয় ধর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় এবং উক্ত বিষয়গুলো বইটিকে সর্বসাকুল্যে পাঠকের কাছে গ্রহনযোগ্য করে তুলে।
● লেখকের পরিচয়
● বিশ্বস্ত প্রকাশনী
● বইয়ের আলোচ্য বিষয়বস্তু
● দৃষ্টিনন্দন পৃষ্ঠাসজ্জা ও বাইন্ডিং
● সামঞ্জস্যপূর্ণ মলাট ।
উপরোক্ত প্রত্যেকটি বিষয়েই বইটি উত্তম ও সুখপাঠ্য।
■ লেখক সম্পর্কে কিছু কথাঃ
—————————————
বইটির লেখক রশীদ জামিলের সবচেয়ে বড় গুন কঠিন কথা ও ভাষাকে সহজ ও সাবলীল ভঙ্গিতে উপস্থাপন করা,যে কারণে শিশু থেকে যুবক আর যুবক থেকে বৃদ্ধ এককথায় আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের জন্যেই সহজপাঠ্য ও বোধগম্য হয়। ‘আহাফি,মমাতি, চেতনার আস্তিন সহ অনেকগুলো পাঠকপ্রিয় বইয়ের রচয়িতা তিনি। খ্যাতিমান এই লেখক বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কলামিস্ট হিসেবে জাতীয় স্বর্ণপদকও লাভ করেন।
■ শেষ কথা ও মন্তব্যঃ
——————————
প্রযুক্তির এই যুগে আবেগ বা হুজুগের কোন স্থান নেই। বাস্তবতার মানদণ্ডে যুক্তির নিরিখেই সবকিছু বিশ্লেষণ করতে হয়। নাসা উইকি ও ভার্চুয়াল দলিল প্রমাণের আলোকে এবং বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য তত্ত্ব ও তথ্যের আলোকে বইটির প্রত্যেকটি কথা ও জবাব পাঠক হৃদয়ে শীতলতার পরশ বুলিয়ে দিবে।বইটির মাধ্যমে পবিত্র কুরআনের মান ও মর্যাদার উচ্চাসন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ প্রত্যেকের ঈমানী কাইফিয়্যাতকে অনেকাংশে বৃদ্ধি করবে বলে আশা রাখছি।
■ একনজরে বইটিঃ
———————–
বইঃ জ্ঞান বিজ্ঞান অজ্ঞান
লেখকঃ রশীদ জামিল
প্রকাশনীঃ কালান্তর প্রকাশনী
পৃষ্ঠাঃ ১৭৬
মুদ্রিত মূল্যঃ ২২০/-
বাঁধাইঃ হার্ড কভার
______________________