নিয়ত হচ্ছে কোনো কাজের পেছনের উদ্দেশ্য কিংবা কোনো কাজের ইচ্ছা করা। এর স্থান অন্তরে, জিহ্বার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। নবী এবং সাহাবিগণ থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা প্রতিটি কাজেই নিয়ত করতেন। যেসব শব্দসমষ্টি ওজু ও সালাতের আগে পড়ার জন্য উদ্ভাবিত হয়েছে, সেগুলো শয়তানের ওয়াসওয়াসার কারণে জনগণের মাঝে বিবাদের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শয়তান সর্বদা তাদের শব্দগুলো সঠিকভাবে উচ্চারণের কথা মনে করিয়ে দেয়, তাই আপনি তাদের কষ্টের সাথে শব্দগুলো উচ্চারণ করতে দেখবেন; যদিও তা সালাতের অংশ নয়; বরং নিয়ত হচ্ছে কোনো কাজের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে মনের সংকল্প। কেউ যখন ওজু করতে বসে, তখন তার ওজুর নিয়ত হয়ে যায় এবং কেউ যখন সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ায়, তখন তার সালাতের নিয়ত সম্পন্ন হয়ে যায়।
.
অতএব, কোনো কাজের ইচ্ছা করলে এমনিতেই নিয়ত করা হয়ে যায়, এর জন্য অতিরিক্ত কষ্ট করার প্রয়োজন নেই। কেউ যদি কোনো কাজ করে, তা হলে সেই কাজ থেকে নিয়তকে সে পরিত্যাগ করতে পারবে না। আল্লাহ যদি তার বান্দাকে কোনো নিয়ত ছাড়া ওজু ও সালাত আদায় করতে আদেশ করতেন, তা হলে তা মানুষের সামর্থ্যের ঊর্ধ্বের বিষয় হতো। যদি কোনো ব্যক্তি একটি কাজ করার পরে মনে করে যে, সে কাজটি করার নিয়ত করেনি, তা হলে এটি পাগলের বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ, সাধারণ বিষয়সমূহে একজন মানুষ নিজের সম্পর্কে জ্ঞান রাখে। কীভাবে একজন সুস্থ মানুষ নিজের কৃত কাজের ব্যাপারে সন্দেহ করতে পারে?
.
যখন কোনো ব্যক্তি জোহরের সালাতের জন্য ইমামের পেছনে দাঁড়ায়, কীভাবে সে এই কাজের ব্যাপারে সন্দেহ করতে পারে? যদি এ সময় কেউ তাকে অন্য কোনো ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে, তা হলে নিশ্চয় সে উত্তরে বলে দেবে যে, ‘আমি ব্যস্ত আছি। জোহরের সালাত আদায় করতে যাচ্ছি।’
.
এসব থেকেও যে বিষয়টা আমাদের বেশি বিস্মিত করে, তা হচ্ছে এই লোকের আশেপাশের লোকেরাও তো তার অবস্থা থেকে নিশ্চিতভাবে তার নিয়ত সম্পর্কে জানতে পারছে! যদি সালাতের সময় কোনো ব্যক্তিকে কাতারে বসে থাকতে দেখা যায়, তা হলে মানুষ নিশ্চিত বুঝবে যে, সে সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে। এবং ইকামাতের সময়ে যদি সে আশেপাশের লোকের সাথে দাঁড়ায়, তা হলে তারা জানতে পারছে যে, সে সালাতের জন্য দাঁড়িয়েছে। যদি সে সবার সামনে গিয়ে একাকী দাঁড়ায়, তা হলে মানুষ বুঝে নেয় যে, সে সালাতে ইমামতি করবে।
.
অতএব, যদি আশেপাশের মানুষ তার বাহ্যিক অবস্থা দেখে তার নিয়ত সম্পর্কে জেনে যায়, তা হলে সেই ব্যক্তি কীভাবে নিজের নিয়তকে অস্বীকার করে? ‘সে কোনো কাজের আগে নিয়ত করেনি’—শয়তানের এমন কানপড়ায় সায় দিয়ে সে সত্যকে অস্বীকার করে এবং শয়তানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, যা আল্লাহর কিতাব, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ ও সাহাবিদের পথ থেকে সুস্পষ্ট বিচ্যুতি।
কারও নিজের নিয়তের ব্যাপারে এমন সন্দেহ সত্যিই আশ্চর্যজনক! যখন কেউ তার সালাত শুরু করতে যাবে, তখন যদি ইমাম রুকুতে থাকে এবং সে রাকাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করে, তা হলে সে দ্রুত তাকবির বলে ইমামের সাথে রুকুতে শরিক হবে। যদি কেউ দাঁড়ানো অবস্থাতেই নিয়ত না করে, যখন সে চিন্তামুক্ত ছিল, তা হলে কীভাবে উক্ত অবস্থায় নিয়ত করবে, যখন সে এই চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে যে, রাকাত ছুটে যায় কি না?
.
কীভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবিগণ ও তাদের অনুসারীদের কেউই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলেন না!? কীভাবে বিষয়টি চিহ্নিত হলো এমন ব্যক্তির কাছে, যে শয়তানের কানপড়ায় প্রভাবিত? এসব ব্যক্তি কি অজ্ঞতার সাথে বিশ্বাস করে যে, শয়তানই হচ্ছে উত্তম উপদেষ্টা? সে কি জানে না, শয়তান কখনো ভালো কাজের দিকে ডাকে না এবং ভালো কাজে পথও দেখায় না? সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সালাত সম্পর্কে কী বলবে এবং যারা তার মতো সালাত আদায় করেনি, তাদের ব্যাপারেই বা কী বলবে? এদের সবার সালাত কি অসম্পূর্ণ ছিল?
এসব বিষয় নিয়েই আশরাফুল আলম সাকিফ অনূদিত ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহর গ্রন্থ ওয়াসওয়াসা : শয়তানের কুমন্ত্রণা।
Umme Suraiya –
#ওয়াসওয়াসা
শয়তানের কুমন্ত্রণা
ইমাম ইবনু কায়্যিম(রা:)
————————————–
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,
قال فبم أغويتنی لأقعدن لھم صرطك المستقم.
অর্থ:সে বলল,তুমি যেহেতু আমাকে পথভ্রষ্ঠ করেছ,তাই আমিও শপথ করছি যে,আমি তাদের (মানুষের)জন্য তোমার সরল পথে ওঁৎ পেতে বসে থাকব।(৭:১৬)
কি ভয়ংকর, কি সাঙ্ঘাতিক কথা একবার ভেবে দেখুন।যখন আমি এই আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে পড়ছিলাম তখন আমি সত্যিসত্যিই ভীষণ হতবাক হয়ে পড়েছিলাম।
বই সম্পর্কিত কিছু কথা :
————————————
আলহাদুলিল্লাহ,বইটিতে শয়তানের বিভিন্ন কূটকৌশল এবং তার পাতা ফাঁদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, লেখক বইটিতে সরলপথে পাতা শয়তানের ফাঁদ সম্পর্কে বিশেষ ভাবে দেখিয়েছেন। স্পষ্ট করে দিয়েছেন কিভাবে শয়তান সরল পথের পথিকদের প্রতারিত করে থাকেন।
সব মিলিয়ে বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল বই।যা বাস্তব জীবনে মানুষকে প্রতারনার হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।
বই সম্পর্কিত তথ্য :
—————————–
বই:ওয়াসওয়াসা
লেখক :ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রা:)
প্রকাশন:সমর্পন
মুদ্রিত মূল্য :১৬৭ টাকা
রিভিউ দাতা :Umme Suraiya