আমরা প্রত্যেকেই নিজের অপূর্ণতা আর অপ্রাপ্তি নিয়ে যতটুকু মাথা ঘামাই, পূর্ণতা আর প্রাপ্তি নিয়ে তার সিকিভাগও মাথা ঘামাই না। ফলে আমাদের সামনে সারাক্ষণ হতাশা আর নিরাশা কিলবিল করতে থাকে৷ আমরা মানসিক অতৃপ্তি আর অতুষ্টিতে ভুগতে থাকি। জরিপ চালালে দেখা যাবে অধিকাংশ মানুষই এই রোগে আক্রান্ত।
এর থেকে পরিত্রাণের একটা সূত্র আছে। তা হলো, নেতিবাচক যেসব ব্যাপার আছে, যেমন : নিজেদের আপদ-বিপদ, দুঃখ-দুর্দশা এবং কষ্ট-যাতনা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সব সময় দৃষ্টিকে নিচের দিকে রাখা৷ নিচের দিকে রাখা বলতে বোঝানো হচ্ছে, যারা এর চেয়ে আরও বেশি নিম্ন অবস্থায় আছে, তাদের দিকে লক্ষ করা। যখন আপনি দেখবেন আপনার বিপদ একটি কিন্তু আপনারই পরিচিত আরেকজনের বিপদ তিনটি, তখন আপনা-আপনিই মন থেকে আলহামদুলিল্লাহ বের হয়ে আসবে৷ আপনি যে তূলনামূলক অনেক ভালো আছেন, সে অনুভূতি নিজের ভেতরে জাগ্রত হবে৷
.
অসংগতি বইটি ভিন্ন ভিন্ন পঁচিশটি লেখা দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি লেখাই আমাদের জীবনকে ভীষণভাবে আলোড়িত করার সক্ষমতা নিয়ে রচিত। দু-একটি উদাহরণ দিই—
‘যথার্থ নির্বাচন’ নামক লেখায় লেখক লিখেছেন : “আজকাল অভিবাবকরা অনেক সময় সন্তানের উপর নিজের পছন্দের বিষয় চাপিয়ে দেন। সন্তানের রুচি-অভিরুচির মোটেই ভ্রুক্ষেপ করেন না। যার পরিণতি অনেক সময় হয়ে থাকে খুবই ভয়াবহ। এখন তো এটা একটা কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘সাবজেক্ট হিসেবে তোমাকে ওটা নির্বাচন করতে হবে’ বলে অভিভাবক নিজের সিদ্ধান্ত শুনিয়ে দেন। অথচ সন্তানের মাথায় হয়তো সেই সাবজেক্ট মোটেই সহজবোধ্য হয়ে ধরা দেয় না। সে না পারে সইতে, না পারে কইতে—দম বন্ধ করে বসে বসে শুধু নীরবে চোখের পানি ফেলে।”
‘তাওফীক’ শিরো নামের লেখায় আছে :
‘আপনি চোখ-কান খোলা রাখলেই নিজের আশেপাশে এমন মানুষ দেখতে পাবেন যে নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ে। তাহাজ্জুদ না পড়লেও ফজরটা ঠিকই জামাতের সাথে পড়ে। কিন্তু এর জন্য তাকে এলার্ম ঘড়ির সহায়তা নিতে হয় না। প্রাকৃতিকভাবেই যথাযথ সময়ে তার ঘুম ভেঙে যায়। এর বিপরীতে অনেকে ঘড়িতে বা মোবাইলে এলার্ম দিয়েও ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠতে পারে না। কোনোমতে শেষ সময়ে দৌড়াদৌড়ি করে ফজরটা আদায় করে। তাহাজ্জুদ কপালে জোটা তো বহুত দূর কি বাত! এটা আসলে তাওফীক এর অভাবের কারণে হয়ে থাকে।’
রবিউল ইসলাম –
জীবন চলার পথে আমরা বিভিন্ন ধরনের অসংগতির সমুক্ষীন হই। এমন অনেক অসংগতি আছে যেগুলো করলে আমাদের ইমান আমল সব হুমকির মুখে পতিত হবে। সমাজের তেমন কিছু অসংগতি নিয়ে লেখা আব্দুল্লাহ আল মাসুদের “অসংগতি” বইটি।
অসংগতি বইতে ২৫ টি প্রবন্ধের মাধ্যমে লেখক সমাজের বিভিন্ন অসংগতি গুলো তুলে ধরেছেন। যেসব অসংগতি আমাদের কখনো চিন্তায়, কাজে, আবার কখনো বিশ্বাসের সাথে সীমাবদ্ধ। লেখক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ কখনো গল্পের ফ্রেমে আবার কখনো প্রবন্ধের সমন্বয়ে বিভিন্ন অসংগতির চিত্র তুলে এনেছেন। যেমন
পাপে পাপ আনে শিরোনামে উঠে এসেছে সোসাল মিডিয়ায় বিভিন্ন অশ্লীল ছবি দেয়ার ফলে কিভাবে আমরা একজনের অনেকেই চেইন সিস্টেমের মত পাপের ভাগীদার হচ্ছি।
“আমার দাড়ি আমার গর্ব” শিরোনামে উঠে এসেছে যেই দাড়ি পুরুষের সৃষ্টিগত একটা সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের প্রতীক। কিন্তু সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির ফলে আজ সেই দাড়িকেই আমরা জঞ্জাল মনে করছি সেই কথা।
যে বাদ্য যন্ত্র বাজানোকে স্বয়ং আল্লাহ নিষেধ করেছেন। কিন্তু আমরা সেসব বাদ্যযন্ত্র আমরা কিভাবে ইসলামি গানের তালে তালে শুনে চলেছি একথাই বর্ণিত হয়েছে “নূরানী ধোকা” শিরোনামে।
এছাড়াও বইতে রয়েছে- সালাম নিয়ে কিছু কালাম, রিযিক, বহুবিবাহ প্রসঙ্গ, হিস্ট্রির হিস্ট্রি, মোহরানা, সন্তান লালন পালন, ভার্চুয়াল জগতে যাপিত জীবন, প্রোফাইল পিকচার ইত্যাদি শিরোনামে বর্ণিত হয়েছে আরো অসংখ্য অসংগতির বর্ণনা।
তাই আমি বলবো বইটি প্রত্যেকের সংগ্রহে রাখার মত একটি বই। বইতে বর্তমান সমাজের কিছু অসংগতির কথা লেখক সহজ সরল ভাষায় গল্প আবার কখনো প্রবন্ধের ফ্রেমে তুলে ধরেছেন। বইটি পড়ুন এবং আমাদের ইমান আমলের জন্য ভয়ংকর এসব অসংগতি থেকে বেচে থাকতে চেষ্টা করুন।
Shahriar Mohammad Aqib –
আমাদের চারিদিকে আজ নানান অসংগতি ছড়িয়ে পড়েছে এবং পড়ছে।এসব অসংগতির ভীড়ে অনেক সময় অসংগতিগুলো চিহ্নিত করাই দুষ্কর হয়ে পড়ে।”অসংগতি” বইটিতে লেখক এরকম বেশ কিছু অসংগতি তুলে এনেছেন।এগুলোর ভয়াবহতা বর্ণনা করেছেন।গল্পের আকারে উপস্থাপন করেছেন এসকল অসংগতির খারাপ দিক।অসংগতিগুলো আমাদের জীবনকে যেন ধ্বংস না করে ফেলে সে বিষয়ে সচেতনতাবোধ জাগ্রত করতে চেষ্টা করেছেন।এসকল অসংগতি ভাইরাসের মতোই নিরবে মানুষের ক্ষতি করে চলেছে। অসংগতিগুলো আবার আমাদের মাঝে নেই তো? আসুন এগুলো জানি এবং এগুলো থেকে বেঁচে থাকি।