বইয়ের ব্যাক-রাইটআপ: জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ১,৫০০-এর বেশি ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছেন। অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্বসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৯,০০০ মানুষ। এই বইতে ২৬ জন শহীদের জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যের আলোকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। শহীদদের দুর্লভ ছবি ও ভিডিও ক্লিপ QR কোডের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। এত প্রাণ ও রক্তের বিসর্জনের অনুপ্রেরণা কী ছিল শহীদদের?
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কলোনাইজারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকা এই ব-দ্বীপের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী কয়েক শত বছর ধরে রক্ত ও প্রাণ বিসর্জন দিয়ে আসছে। এই জনপদের মানুষ যুগের পর যুগ ইংরেজদের শোষণ ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে—বুলেটের বিপরীতে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে। অসংখ্য প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়। মুসলিম পরিচয় শুধুই রাষ্ট্রগঠনের ভিত্তি ছিল না; এটি একটি ঐতিহাসিক প্রতিরোধের চেতনার প্রতিফলন।
এত ত্যাগের বিনিময়ে মানুষের চাওয়া ছিল সামান্যই; ইনসাফ (মুসলিম হিসেবে অধিকার, সুবিচার, সুশাসন) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এমন এক সমাজ, যেখানে তারা স্বাধীনভাবে জীবন-জীবিকা গড়তে পারবে এবং নিজেদের মানোন্নয়নে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু নতুন দেশেও সাধারণ মুসলমানদের স্বপ্নভঙ্গ ঘটে। ক্ষমতা-কেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন, ভারতবেষ্টিত পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মানুষ জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়। এরই ফলশ্রুতিতে, অনেক মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে এই জনপদ নতুন দেশ হিসেবে স্বাধীনতা অর্জন করে।
ইনসাফের দাবিতেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আবু সাঈদরা বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে রচনা করেন নতুন এক অধ্যায়। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে ৫ আগস্টে আবারও জেগে ওঠে এক নতুন স্বপ্ন। এত ত্যাগের পরও কি সেই স্বপ্ন, সেই ইনসাফ ভিত্তিক কাঙ্ক্ষিত সমাজব্যবস্থা আবারও অধরাই থেকে যাবে?
লেখক পরিচিতি: ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন ১৯৭৬ সালে জামালপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে (ঘোষেরপাড়া, মেলান্দহ) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গত ২৪ বছরের অধিক সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা এবং বায়োমেডিক্যাল ও জনস্বাস্থ্য সেক্টরে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ড. হোসেন National University of Singapore-এ পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি DUKE-NUS Graduate Medical School এবং Singapore Cancer Centre-এ পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেন। প্রবাসে এক যুগের বেশী সময়ের রিসার্চ ট্রেইনিং শেষে তিনি বাংলাদেশে ফিরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর তিনি ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে বায়োটেক ডিভিশনের সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড লাইফ সায়েন্স-ডিসিপ্লিনে সহযোগী অধ্যাপক। ইউনিভার্সিটি অব ওলংগং (অস্ট্রেলিয়া)-এ অনারারী সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে জড়িত আছেন। ড. হোসেন গত ১২ বছর ধরে থ্যালাসেমিয়া, শিশুদের স্থূলতা, ডেঙ্গু, এবং ক্যান্সারের মতো অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা করছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, এবং সামাজিক মূল্যবোধ বিষয়ে তিনি গত ২৮ বছর ধরে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখির মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। করোনা মহামারির সময় তিনি জনপ্রিয় গণমাধ্যম এবং টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতিনির্ধারণ আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ড. হোসেন তিনটি বইয়ের লেখক: ‘সন্তান প্রতিপালনে এ যুগের চ্যালেঞ্জ’, ‘বিসিএস নাকি বিদেশে উচ্চশিক্ষা?’ এবং ‘সমতার আড়ালে সমকামিতা মিশন’।
Reviews
There are no reviews yet.