“মুসান্না “একজন সাহাবী।একজন মুজাহিদ। একজন সেনাপতি। ইতিহাসের পাতায় পাতায় তাঁর নাম লিখা আছে রক্তের হরফে, সাহসের কালিতে। তিনি তাঁর তেজোদ্বীপ্ত তলোয়ারের ডগা দিয়ে রচনা করেছেন এক রক্তলাল ইতিহাস। বিরল প্রতিভার অধিকারী এই মহান সেনাপতি শক্তিধর পারস্যের মোকাবিলায় মাত্র এক হাজার সৈন্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বীর বিক্রমে। যুদ্ধের ময়দানে তিনি সবসময় ছিলেন পাহাড়ের মতো অটল, পর্বতের মতো অবিচল। ভয়, শংকা ও সেনাস্বল্পতা একটি বারের জন্যেও বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি তাঁকে।একের পর এক বড় বড় বিজয় এসে আছড়ে পড়েছে তাঁর পায়ে পায়ে।
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে কর্নেল মুহাম্মাদ ফারাজ এই মহান সেনাপতির জীবনোপাখ্যান বর্ণনা করেছেন বিপ্লবী কলমের আঁচড়ে আঁচড়ে।
নাফিসা ইয়াসমিন –
প্রাক কথন
——————
আজ পৃথিবীতে যত গোলাপ ফোটে তার রক্তিম বর্ণ মুসলিম উম্মাহর রক্তে রাঙা! সারা বিশ্বব্যাপী তারা অপাংক্তেয় পরিত্যক্ত।শাসন নয়, শোষিত হতে তারা অভ্যস্ত। শত সংগ্রামের কাফেলা পেরিয়ে তাদের ওপর বর্তমানে নেমে এসেছে পতনের যবনিকা।
সারা বিশ্বব্যাপী ক্ষতবিক্ষত উম্মাহর মাঝে নেই কোন বীর সৈনিক যে তাওহিদের মিছিলে নেতৃত্ব দেবে , নেই কোন নাবিক যে অন্ধকার সমুদ্রে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ দেখাবে!
ইসলামের সত্যের আলো নিভে গেছে বহু যুগ আগে, নেই সেই প্রভাতি আলোর দীপ্তকিরণ। মুসলিম উম্মাহর ঈমানি তাকওয়া জোনাকির আলোর মতোই ক্ষীণ, নিষ্প্রভ!
এই নিভু নিভু চেতনাকে ঈমানের আলোকচ্ছটায় আলোকিত করতে ফিরে তাকাতে হবে আমাদের ফেলে আসা সোনালী অতীতে।
ইতিহাসের পাতা থেকে কুড়িয়ে আনতে হবে সেইসব বীর সৈনিকদের আত্মকথা যাদের অনাবিল আত্মত্যাগের ছোঁয়ায় পৃথিবীটা নির্মল ছিল।
হাসানাহ পাবলিকেশন প্রকাশিত “সীমান্তে মহাবীর” গ্রন্থে রয়েছে এক মহাযোদ্ধা “মুসান্না’র” উপাখ্যান।
ইতিহাসের পাতায় পাতায় যাঁর নাম লেখা আছে রক্তের হরফে, সাহসের কালিতে।
বইটির বিষয়বস্তু
————————
হাসানাহ পাবলিকেশন প্রকাশিত “সীমান্তে মহাবীর” গ্রন্থটি আবর্তিত হয়েছে “মুসান্না” কে ঘিরে মুসান্না যিনি ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য সাহাবী।
চমকপ্রদ শিরোনামে বেশ কয়েকটি অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে মুসান্না রাঃ এর উপখ্যান। সূচিপত্রে উঠে এসেছে মুসান্না বিন হারিস রাঃ এর জন্ম, মৃত্যু, তার বংশ পরিচয় ও তার পরিবার, যিকারের ঘটনা, মুসলমানদের বিজয়, ইহুদি ও মাজুসিদের চুক্তি, সৈনিক মুসান্না গেরিলা আক্রমণ, মুসান্না রাঃ এর পদক্ষেপ,মুসান্নার যুদ্ধ অভিযান, খানাফিস যুদ্ধ, বুইয়াব যুদ্ধের ঘটনা, অন্যান্য যুদ্ধে সময়ে, ইসলাম ত্যাগের মহামারির কবলে মুসলিম বিশ্ব, মুসলমান দের বিজয় প্রভৃতি। সমগ্র বইটিতে উঠে এসেছে তৎকালীন সময়ে ইসলামের অবস্থান ও ইসলামী ইতিহাস।
একজন মুজাহিদ তথা বীর সেনাপতি যিনি তাঁর তেজোদ্বীপ্ত তলোয়ারের ডগা দিয়ে রচনা করেছিলেন এক রক্তসংগ্রাম। যাঁর হাতে উড্ডিয়মান ছিলো তাওহিদের পতাকা। নিজ যোগ্যতা আর শ্রেষ্ঠত্যের বিভায় প্রোজ্জ্বল সেই মহাবীর ইসলাম গ্রহণের আগে ছিলেন বাহরাইনখ্যাত। ইসলাম গ্রহণের পর হয়েছেন আরব তথা জগদ্বিখ্যাত।
বিরল প্রতিভার অধিকারী এই মহান সেনাপতি শক্তিধর পারস্যের মোকাবিলায় মাত্র এক হাজার সৈন্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বীর বিক্রমে। যুদ্ধের ময়দানে তিনি সবসময় ছিলেন পাহাড়ের মতো অটল, পর্বতের মতো অবিচল। একের পর এক বড় বড় বিজয় এসে আছড়ে পড়েছে তাঁর পায়ে পায়ে। একজন অকুতোভয় সালার হয়ে ইতিহাসে আছেন উজ্জ্বল নক্ষত্র।
পাঠ্য-অনুভূতি
———————-
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে কর্নেল মুহাম্মাদ ফারাজ এই মহান সেনাপতির জীবনোপাখ্যান বর্ণনা করেছেন বিপ্লবী কলমের আঁচড়ে আঁচড়ে যা হৃদয়কে সিক্ত করে।
তাঁর কলমে ফুটে উঠেছে আমাদের ঘোরলাগা ঝলমলে অতীত ও সত্যের পথে অবিচল থাকা এক বীর যোদ্ধার শ্রেষ্ঠত্বের গল্পগুলো।
আপ্লুত হয়েছি সাহসে সাহসে ভরপুর একটি ইতিহাসের গল্প পড়ে। ধুলোমাখা ইতিহাসের পাতায় উম্মাহর স্বকীয়তা, বীরত্ব ,অন্তরে ঈমানী বসন্তের জোয়ার তোলে।
ঐশী আলোয় আলোকিত পূর্বসূরিদের আত্ম-উৎসর্গে রয়েছে আগামী ঊষার উদয়কালের নরম আলোর ঝলকানি।
লেখক ও অনুবাদকের চমৎকার রচনাশৈলী ও শব্দ চয়নের মাধুর্য্য, সাবলীল ও প্রাঞ্জল উপস্থাপন সহজেই পাঠকের হৃদয়ে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দেয়।
কেন পড়বেন
——————-
ইসলামের গৌরবকে অনুভব করতে এবং ইসলামের ইতিহাস কে উপলব্ধি করতে বইটি সমস্ত মুমিনের পড়া আবশ্যক। একজন মুমিন হিসাবে যারা ইসলামকে ভালোবাসেন , যারা মনেপ্রাণে চান আজ অরাজকতার দুনিয়াই তওহীদের প্রতিষ্ঠা তাদের বইটি মোটিভেট করবে দারুণভাবে নিঃসন্দেহে। মুসলিম উম্মাহর জন্য আবশ্যক হলো তাদের ইলম, বুদ্ধি ও বিবেক দিয়ে, অনুভব ও অনুভূতি দিয়ে তাদের সুমহান ইতিহাস রপ্ত করা। উপলব্ধির বিষয় ইসলামের মুজাহিদরা এতো নগণ্য সংখ্যক সৈন্য নিয়ে ততকালীন পরাশক্তিকে পরাভূত করতো।
শেষ কথন
——————
মুসলিম উম্মাহর ক্রান্তিকালে আমরা আজ পর্যাদুস্ত ঘরে বাইরে সর্বক্ষেত্রে। আমাদের নিভু নিভু ঈমানী চেতনা ও হারানো গৌরব পুনর্জাগরণের জন্য অনুসরণ করতে হবে মুসান্নার মত বীর মুজাহিদের যাঁদের তওহীদের তরবারির ঐশি ঝলকানিতে ইসলামের সোনালি দিনে দ্বিখণ্ডিত হতো কুফরির বেড়াজাল। তাঁদের চলার পথ আমাদের দেখায় সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ।
মুসান্নার মতো এক জীবন্ত কিংবদন্তির উপাখ্যানের পরশ তাকওয়ার আলোয় উদ্ভাসিত করে মুমিন হৃদয়।
📚এক নজরে বই পরিচিতি
বই: সীমান্তের মহাবীর
লেখক: কর্নেল মুহাম্মাদ ফারাজ
অনুবাদ: নূর হোসাইন উমর
সম্পাদনা: ইমরান রাইহান
প্রকাশনা: হাসানাহ পাবলিকেশন