রামাদান মাস হচ্ছে মুসলিম জাতির আমলি বসন্ত। প্রত্যেক প্র্যাক্টিসিং মুসলিম এই
মাসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে। এই মাসে আমলের সওয়াব অন্য
মাসগুলোর আমলের তুলনায় অনেক বেশি। তাই আমাদের সবারই লক্ষ্য থাকে এ মাসে
বেশি বেশি আমল করা, আরো বেশি প্রোডাক্টিভ থাকা।
এমাসে আমাদের কাজকর্ম, পড়াশুনা, পারিবারিক চাহিদা পূরণ ইত্যাদির পাশাপাশি
অর্ধেক দিন সিয়ামরত অবস্থায় এবং বাকি অর্ধেক সময়ে রাতের ইবাদত এবং কুরআন
তিলাওয়াতও করতে হয়। এটা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ।
রামাদান মাসে কীভাবে এত এত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে আরো বেশি প্রোডাক্টিভ
থাকা যায়, সে বিষয়েই কিছু কার্যকর পরামর্শ দেয়া হবে এ বইয়ে। রামাদানের
প্রস্তুতি, লক্ষ্য, পরিকল্পনা ও রুটিন বানাতে এ বই আপনাদের জন্য সহায়ক হবে
ইনশাআল্লাহ। রামাদানে আমলে মনোযোগী হওয়ার, কুরআন পড়ার ও দুআ করার
ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে এ বইয়ে। শুধু তাই নয়, রামাদানের খাদ্যাভ্যাস ও
ফিটনেস ধরে রাখার উপায়, একাডেমিক পরীক্ষার ব্যস্ততা সামলে আমল করার উপায়ও
বাতলে দেয়া হয়েছে এ সংকলনে। সবশেষে, রামাদানের পরেও কুরআনের সাথে সম্পর্ক
বজায় রাখার ও সুস্থ থাকার পরামর্শ দিয়ে সাজানো হয়েছে এ বই।
আশা করি, বইটি রামাদানের প্রস্তুতির জন্য ও প্রোডাক্টিভভাবে রামাদান কাটানোর
জন্য কার্যকর একটি গাইডবুক হবে ইনশাআল্লাহ।
সিরাজাম বিনতে কামাল –
▪️প্রারম্ভিকা:
………………….
প্রকৃতিতে বিরাজ করে রুক্ষতা, শুষ্কতা। বৃক্ষ হয়ে পড়ে পত্রহীন, পুষ্পহীন। যেনো প্রকৃতি প্রাণহীন। থাকেনা কোন সতেজতা, বিলীন হয় সবুজতা। এরপর আসে বসন্ত। প্রকৃতি সাজে নতুন রূপে। দেখা মেলে কচি পত্রের হাতছানি। কোকিলের কুহুতান, উল্লাসে প্রস্ফুটিত হয় পুষ্পেরা। মনেই হয় না, প্রকৃতি কিছুদিন আগেও ছিল নিষ্প্রাণ।
মানুষের জীবনেও আসে বসন্ত। রামাদান মুসলিম জাতির আমলি বসন্তের মাস। এ’মাসের আমলের সওয়াব অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। প্রত্যেক মুসলিম এ’মাসকে কাজে লাগাতে চায়। পাপ-পঙ্কিলতা দূর করে আমলনানায় পুণ্য যোগ করতে চায়। খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করে ভাল অভ্যাস গড়ার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়।
প্রত্যেক প্রোডাক্টিভ মুসলিমের জন্য রামাদান মাস একটা চ্যালঞ্জিং সময়। নিত্যদিনের ব্যস্ততার পাশাপাশি প্রোডাক্টিভ ভাবে রামাদানে আমল করতে যেয়ে অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলেন। অনেকেই শত চেষ্টা করেও নিজেকে প্রোডাক্টিভ রাখতে পারেন না বা রামাদানের প্রথম কয়েকদিন বেশ প্রোডাক্টিভ থাকলেও আস্তে আস্তে সবকিছু কেমন শ্লথ হয়ে আসে। আর এই সমস্যার সমাধানেই ‘প্রোডাক্টিভ রামাদান’ বইটি আমাদের জন্য সঠিক পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।
▪️বই অভ্যন্তরে:
………………….
‘প্রোডাক্টিভ রামাদান’ বইটির সূচিপত্রে চোখ বুলালেই আমরা অনুধাবন করতে পারবো বইটা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখযোগ্য কিছু টপিক হলো:
১/ রামাদানের প্রস্তুতি
২/ রামাদানের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হবার ১০টি মূল কারণ
৩/ একটি সফল রামাদান পরিকল্পনা
৪/ রামাদানের আদর্শ রুটিন
৫/ যেভাবে রামাদানকে সাফল্যমন্ডিত করা যায়
৬/ রামাদানের হারিয়ে যাওয়া সহজ ১২সুন্নাহ
৭/ রামাদানে কখন কী দু’আ করব
৮/ রামাদানে কীভাবে কুরআন পড়ব
৯/ রামাদানের শেষ দশকের প্রস্তুতি
১০/ রামাদানে আমলে মনোযোগী হওয়ার উপায় এবং রয়েছে কীভাবে আমরা রামাদানে সুস্থ থাকতে পারবো। রামাদানের এই অভ্যাসগুলো কীভাবে পুরো বছর ধরে রাখতে পারব তার-ও উপায় বাতলে দেওয়া আছে এ’বইয়ে।
সর্বোপরি একজন মুসলিম কীভাবে তার রামাদানকে জীবনের একটি শ্রেষ্ঠ রামাদানে পরিণত করবে তার সকল দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে এ’বইয়ে।
▪️বই পড়ে আরো জানতে পারবেন: রামাদানের পুরস্কার, গুনাহ মাফের উপায়, বেশি বেশি যিকির করার উপায়, ছোট্ট কিন্তু পুণ্যতায় ভারী দু’আ যিকিরসমূহ, নবী (সাঃ) এর রামাদানের আমলের একটা সুন্দর ছবিও দেখতে পাবেন এ’বই পাঠের মাধ্যমে।
▪️কারা পড়বেন:
…………………..
মুসলিম সকলের জন্য এ’বই, যেকোনো বয়সী, যেকোনো পেশার। বিশেষ করে যারা, রামাদানের একটা মুহূর্তও হেলায় না কাটিয়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে উঠতে চান, তাদের জন্য বইটি। আবার যারা রামাদানে কীভাবে কী করবেন, কোন কোন আমল করবেন, এত ব্যস্ততায় কীভাবে রামাদানে প্রোডাক্টিভ থাকবেন বা যাদের এই রামাদানেই এক্সাম চলে আসছে। কোন কূল-কিনারা পাচ্ছেন না কী করবেন! তাদের জন্যেও এ-বইটি।
▪️অবশেষে:
…………….
আর দেরি না করে আজই বইটি কালেক্ট করে পড়া শুরু করে দিন। পড়লে দেখবেন আমি রিভিউতে খুব অল্পই লিখেছি, বইটি আসলে আরও বেশি প্রশংসনীয়। হতে পারে, এই রামাদানই আমার/ আমাদের জীবনের শেষ রামাদান। জীবনের একটা রামাদান অনন্ত প্রোডাক্টিভ হোক। আমি/আমরা চেষ্টা করে যাই। আল্লাহ আমি/আমাদেরকে কবুল করে নিক। আমিন!
Farzana Ashrafi –
মুমিনের আমলের বসন্ত ‘রামাদান’ আমাদেরকে অফার করে নিজেদের আমল, ঈমানকে বহুগুনে প্রবৃদ্ধ করে নেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হবার এক অনির্বচনীয় সুযোগের। সচেতন মুসলিম মাত্রই রামাদানের এই মাহাত্ম সম্পর্কে জ্ঞাত। আমরা সবাই-ই রামাদানের এই ফায়দা নিতে আগ্রহী হলেও কার্যকর পরিকল্পনা এবং আগ্রহ-উদ্দীপনার অভাব, আমলের ধারাবাহিতা রক্ষা করতে না পারা, শারীরিক ফিটনেসের স্বল্পতা, সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা ইত্যাদির ফলে বাকি ১১ মাসের মত রামাদানও গতানুগতিক পথেই পার হয়ে যায়। বাস্তবিক অর্থে, অন্য যে কোন কাজের মত রামাদান মাসেও নিজের আমল-ইবাদাত-আখলাকের স্তরকে উন্নত করার জন্য প্রয়োজন সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ, সময় ব্যবস্থপনা এবং পূর্ণাঙ্গ শারীরিক-মানসিক প্রস্তুতি।
রামাদানের মাসলা-মাসায়েল এবং গুরুত্ব-মাহাত্ম্য নিয়ে বাংলা ভাষায় চমৎকার সব লিটারেচার থাকলেও কীভাবে এ মাসের প্রতিটি মুহুর্তকে প্রোডাকটিভ ভাবে কাজে লাগিয়ে নিজের আমলের ঝুড়িকে পূর্ণ করা যায় সেরকম দিকনির্দশনা মূলক কাজ খুবই কম।
দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই রামাদানের দিনগুলোকে কীভাবে সর্বোচ্চ প্রোডাকটিভ ভাবে ব্যবহার করে পূর্ণ ফায়দা উসুল করা যায় তার সবক দিতে মাকতাবাতুল আসলাফের বই ‘প্রোডাকটিভ রামাদান’ নামের চমৎকার একটা সংকলন। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এক ঝাঁক আলীম ও দাঈ, লাইফ কোচ, টাইম ম্যানেজমেন্ট এক্সপার্ট, চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ, ফিজিক্যাল ফিটনেস ট্রেইনার এবং ব্লগারের রামাদান বিষয়ক লেকচার ও প্রবন্ধের অনুবাদের মলাটবদ্ধ রুপ ‘প্রোডাকটিভ রামাদান’।
বইয়ের লেখা গুলোকে এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যা থেকে সহজেই –
> বিগত রামাদান গুলোতে পরিকল্পনা মাফিক আমল-ইবাদাত করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ গুলো চিন্হিত করা যাবে।
> আসন্ন রামাদানের প্রস্তুতি এবং একটা সফল রামাদান পালন করার জন্য কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা যাবে।
> দৈনন্দিন কাজের সাথে সমন্বয় করে রামাদানের জন্য আদর্শ রুটিন তৈরি করা যাবে।
> কুরআনের মাসে কুরআনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের উপায় গুলো জানতে পারার মাধ্যমে কুরআনের সাথে সম্পর্ক আরো নিবিড় হবে।
> রামাদান চলাকালীন এবং রামাদান পরবর্তী সময়ে সঠিক খাদ্যভাস এবং ফিজিক্যাল ফিটনেস বজায় রাখার তরিকা গুলো জানা যাবে।
> রামাদানের হারিয়ে যাওয়া সুন্নাহগুলো জানার মাধ্যমে নতুন করে অভ্যাস করা যাবে।
> আমরা দুআ এবং আমলে মনযোগী হতে পারব।
> রামাদানের শেষ দশক থেকে সর্বোত্তম ফায়দা আদায়ে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারব।
> শিক্ষার্থীরা রামাদানে আমল-ইবাদাত চালু রাখার পাশাপাশি এ্যাকাডেমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা লাভ করবে।
> রামাদানের পরেও কীভাবে কুরআনের সাথে সম্পর্ক রাখা যায় সেটাও জানা যাবে।
এছাড়াও, এ বইয়ের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ ‘রামাদানের মুহাসাবা’ নামক অধ্যায়টি। যেকোন লক্ষ্য ভেদ করার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ : পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং মূল্যায়ন। উল্লিখিত অধ্যায়ে ‘মুহাসাবা’ বা আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে নিজের কাজের মূল্যায়নের মাধ্যমে নিজের হিসেব গ্রহনের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এমনটা অভ্যাস করলে কাজের ভুল-ক্রুটি যেমন সংশোধন করা যায়, তেমনি আমলের ধারাবাহিতা রক্ষার জন্যও তা বিশেষভাবে সহায়ক। এখানে রামাদানের ৩০ দিনের জন্য একটি নমুনা মুহাসাবা সংযোজন করা হয়েছে এবং সহজে আমল যোগ্য কিছু নাসীহাহ ও নিজের লক্ষ্যকে মজবুত রাখার জন্য আত্মজিজ্ঞাসা মূলক প্রশ্ন দেয়া হয়েছে যাতে বিষয়টা পাঠকদের বুঝতে সহজ হয়।
এক কথায় বলা যেতে পারে, রামাদানকে সামগ্রীকভাবে প্রোডাকটিভ করার একটা কার্যকর গাইডলাইন এই বইটি।
তবে চাঁদের কলঙ্কের মত এই বইয়েও যে ত্রুটি চোখে পড়েছে তা হচ্ছে, কোথাও কোথাও অনুবাদের দুর্বলতা। আক্ষরিক অনুবাদের কারণে প্রায়শই পাঠ সাবলিলতা বাধাগ্রস্থ হয় বা বুঝতে সমস্যা হয়।