সাত দ্বীনি বোনের দ্বীন মেনে জিতে যাওয়ার অনন্য কিছু মুহূর্ত ধারণ করে আছে বইটি।
নারীবাদের স্লোগানে মুখরিত ও নারী স্বাধীনতার বুলি আওড়ানো কোনগুলো কতটা ধোকায় আছে তা পরখ করে নিতে এবং দ্বীন-ইসলামই যে নারীর প্রকৃত মুক্তি ও সফলতার সোপান তা চেখে নিতে ‘সেভেন সিস্টার্স’ লিখিত এবং জাফর বিপি সম্পাদিত অনবদ্য এক গল্পগ্রন্থ ‘বিজয়িনী’
সিরাজাম বিনতে কামাল –
☘️প্রারম্ভিকা:
—————–
আমাদের স্বপ্ন যেনো আকাশছোঁয়া। আর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য আকাশ ছুঁতে গিয়ে আমরা অন্ধকারে পতিত হয়। ক’জনইবা পারে বিজয়ী হতে।
উন্নতির (!) জোয়ারে ভাসছি আমরা সবাই। এখন আর আমরা ঘরকুনো নই, থাকিনা স্বামীর বাদী হয়ে, পাতিলের কালি ফেলে সময় নষ্ট করি না, সুই সুতার ফোঁড়নে বুনা হয়না নকশীকাঁথা।
আমরা এখন পুরুষের হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলছি সম্মুখপানে। নিজেই উপার্জনক্ষম হচ্ছি। স্বামীর আশায় পথ চেয়ে বসে থাকার দিন শেষ। নিজে উপার্জন করতে পারি বলেই নিজের আরও ভালো থাকার জন্যে নিয়ে নিচ্ছি ডিভোর্স।
আমাদেরও রয়েছে সম অধিকার। কেনো আমরা ঘরকুনো হয়ে রবো! স্বামীর দাসত্ব করবো! পরিবারের পেছনে খেঁটে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার দিন শেষ।
নারীবাদের স্লোগানে মুখরিত ও নারী স্বাধীনতার বুলি আওড়ানো বোনগুলো কতটা ধোকায় আছে তা পরখ করে নিতে এবং দীন-ইসলামই যে নারীর প্রকৃত মুক্তি ও সফলতার সোপান তা চেখে নিতে ‘সেভেন সিস্টার্স’ টিমের লিখিত বই ‘বিজয়িনী।’
☘️রিভিউ কথন:
———————
যখন কিছু মানুষ জামানার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নফসকে খুশি করছে, রব্বের বিধানের তোয়াক্কা করছে না। ঠিক তার বিপরীতে কেউ কেউ রবের সন্তুষ্টির জন্যে নফসকে হারিয়ে দিচ্ছে। নিজের ঝুলিতে কুড়িয়ে নিচ্ছে বিজয়।
ঠিক এমনি কিছু জীবনের গল্প নিয়ে বই ‘বিজয়িনী’। বইয়ে মোট ৭টি গল্প রয়েছে। গল্পগুলো পড়লে অনায়াসেই আপনি বুঝতে পারবেন কেনো বইয়ের নাম ‘বিজয়িনী’!
গল্পসমূহ:
———–
👉মধ্যরাত: ঘোর অন্ধকারে পতিত হয়ে, জীবনের কোন মূল্য নেই ভেবে আত্মহত্যা করতে যাওয়া নীলা নামের মেয়েটি আলোর দিশা পায় মালিহা আপুর মাধ্যমে। বেলা ফুরাবার আগেই সে ফিরে আসে তার রব্বের পানে। অবশেষে নীলার আকাঙ্খা অনুযায়ী, রব্ব তার গুনাহগার বান্দীর গুনাহ মোচন করে তাঁর কাছে ডেকে নেন।
👉বিজয়ের স্বরুপ সন্ধানে: ভার্সিটির চটপটে মেয়ে তিথি। নারী অধিকার নিয়ে যার বক্তব্য প্রশংসার দাবিদার। তবে সে প্রায়ই তুলির ড্রেসাপের দিকে আঙুল তুলে। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা কর্মী কিনা অন্য এক নারীর পোশাকের স্বাধীনতা হরণ করতে চায়। একসময় সে তার ভুল ঠিকই বুঝলো কিন্তু ভুল শুধরাতে পারবে কি না তা অজানাই রয়ে গেলো।
👉আলোকচ্ছটা: কায়েনাত। মা-বাবার আদুরে মেয়ে। ছোট থেকেই নাচে সেরা। মা স্বপ্ন দেখে মেয়ে বড় হয়ে দেশের নামকরা কোরিওগ্রাফার হবে। কিন্তু মেয়ের বাবা বরাবরই চায় মা-মেয়ের এসব পাগলামো বন্ধ হোক।
কায়েনাতের কাজিন দু’জন রুফাইদা, রুমাইসা। যারা আধুনিকা না, তবে রব্বের রঙে নিজেকে রাঙানোতে কোন কার্পণ্য নেই তাদের মাঝে। রুফাইদা, রুমাইসা তাদের ভাই সাফুওয়ানের চালচলনে ইসলামের সৌন্দর্যই প্রকাশিত হয়। আর এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় কায়েনাত।
কায়েনাত শান্ত গলায় বলে, ‘রুমাইসা আমিও তোমাদের পথের পথিক হতে চাই। উচ্ছ্বসিত হয়ে বলতে চাই- আমিও বিজয়িনী।’
👉হিডেন হ্যাপিনেস: রামিসা দ্বীন মেনে চলা মেয়ে। তবে পরিবারের সদস্যরা বলে এতো গোঁড়ামির দরকার কী! এভাবে চললে কখনো বিয়েই হবে না। আর আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীর ত্যাড়া খোঁচা তো আছেই।
তবে রামিসা জানে, আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন। সে অপেক্ষা করতে রাজি আছে, কিন্তু ভুল করতে নয়।
একদিন রামিসার মায়ের সকল ভুলের অবসান ঘটে। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে রামিসা উত্তম জীবনসঙ্গী খুঁজে পায়।
👉জান্নাতি ফুল: মা-বাবার ছোট এবং চতুর্থ মেয়ে তাহনিয়া। আবারও মেয়ে জন্ম দিয়েছে তাহনিয়ার বাবা আবার বিয়ে করে। শোক সইতে না পেরে অভিমানে তাহনিয়ার মা রব্বের প্রিয় হয়ে যান। বাবা ব্যস্ত থাকেন নতুন মাকে নিয়ে। তাহনিয়া বড় হতে থাকে তার বড় আপুর কাছে।
একসময় তাহনিয়ার বাবার ভুল ভাঙ্গে। তিনি বুঝতে পারেন ছেলে-মেয়ে যাই হোক, তা আল্লাহর দান। আর মেয়েরা তো ঘরের রহমত, বরকত।
👉উসরাতি: সুখী দম্পতি জুনায়েদ মারিয়াম। সারাক্ষণ যাদের খুনসুটি লেগেই থাকে। তবে ভালোবাসাতে নেই কোন কার্পণ্য। বসের কথায় উঠবোস করে না বলে জুনায়েদের ঘন ঘন ট্রানফার হতে হয় এক শহর থেকে অন্য শহরে। সেই সুযোগে ভ্রমণপিপাসু মারিয়াম ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ করে নিচ্ছে।
মারিয়ামের একবার লঞ্চে কথা হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী মৌমিতার সাথে। মৌমিতার করা কৌতূহলী সব প্রশ্নের উত্তর দেয় মারিয়াম। আর সে মন থেকে চায়, মৌমিতারা যেনো সঠিক পথ খুঁজে পায়। যারা গন্তব্যের পথ চলতে গিয়ে সচেতন থাকে তারাই তো বিজয়ী।
👉নারীর ক্যারিয়ার ও সফলতা: মিষ্টি মেয়ে তুবার আম্মি বাশারা। মেয়ের আদর দিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলে সে। মাদ্রাসায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে। আর মনে পড়ে যায় তার ছোটবেলার কথা।
তার ছোটবেলায় মাদ্রাসায় পড়াটা মোটেও সুখকর ছিলো না। কারণ মা চাইতেন না তারা দু’বোন মাদ্রাসায় পড়ুক। বাবা চেয়েছেন বলেই দু’বোনের মাদ্রাসায় পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।
আজ বাশারা একজন আদর্শবান মা। সে তার বান্ধুবি মিথিলার সব ভুল ভেঙে দেয়। বুঝিয়ে দেয় কোনটা নারীর ক্যারিয়ার আর তার সফলতা।
বাশারা খুব করে চায়, বাংলার প্রতিটি মেয়ে যেনো বুঝতে পারে নারীর আসল ক্যারিয়ার কী! সে চায় বাংলার প্রতিটি মেয়ে যেনো সত্যিকার অর্থেই জিতে যায়। তারা যেনো প্রকৃত বিজয়ের স্বাদ পায়।
☘️বই থেকে কিছু প্রিয় লাইন:
————————————
🥀 দুনিয়ার জন্যে ততটুকুই অর্জন করো, যতটুকু সময় তুমি দুনিয়াতে থাকবে। আখেরাতের জন্যে ততটুকুই অর্জন করো, যতটা সময় তুমি আখিরাতে থাকবে।
🥀 ইসলাম মানেই আত্মসমর্পণ করা। নিজের সুবিধার জন্য তা বদলানো যাবেনা। বরং ইসলামের সুবিধার জন্য নিজেকে বদলাতে হবে।
🥀 আমরা মুসলিম মেয়েরা কোন ফুলদোকানের সাজিয়ে রাখা গোলাপ না যে রাস্তা-ঘাটে, হাটে-মাঠে, যেখানে সেখানে সুগন্ধি বিলিয়ে বেড়াব।
আমরা মেয়েরা সাগরের তলদেশে লুকিয়ে থাকা ঝিনুকের বুকে লেপ্টে থাকা ঝলমলে মুক্তোর দানা। যার সৌন্দর্য আর মূল্য সম্বন্ধে দুনিয়ার বাদশাহ থেকে মেথর পর্যন্ত অবগত। কিন্তু যে কেউ তার নাগাল পায়না। যে কেউ তাকে দেখতে পায়না, ছুঁতে পারেনা। ঠিক তার উপযোগী-ই কেউ পারে তাকে আয়ত্ত করতে।
🥀 সুখ তো মনের সুখ, যা ছোট্ট ঘরে থেকেও পাওয়া যায়।
🥀 নারী-পুরুষের অবাধ বন্ধুত্ব এগুলো তথাকথিত নারীবাদীদের ভেলকি।
🥀 যে নারীর অন্তর আল্লাহর নূরে নূরান্বিত তখন বাইরের কোন জাহেলি তীর তাকে ঘায়েল করতে পারে না
🥀 যারা চলে খোদার দেখানো পথে, সেই পথে আসে তুমুল বাধা-বিপত্তি। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তবেই না মেলে সীরাতে মুস্তাকিম।
☘️ভালোলাগা/ মন্দলাগা:
——————————-
আমরা মানুষ। কোন কাজ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করার যোগ্যতা আমাদের নেই। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করতে পারব। আল্লাহ সফলতা দেওয়ার মালিক।
কোন বইয়ে খুঁত ধরার মতো যোগ্যতা এখনো আমার হয়নি। আর যেহেতু বইটা ইসলামি গল্প দিয়ে সজ্জিত। এখানে হারাম বা অশ্লীল কিছু নেই। বরং রয়েছে ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে দেওয়ার মতো কিছু এলার্মিং বাক্য। রয়েছে অজানা অনেক হাদীস আর তার রেফারেন্স।
কিছু বই থাকে মন খারাপের সময় মন ভালোর সঙ্গী হিসেবে কাজ করে৷ আমার এ’রকম কিছু বইয়ের মধ্যে এ’বইটাও আছে। আলহামদুলিল্লাহ!
☘️অবশেষে:
—————-
একজন নারীকে অন্য একজন নারীই সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারে। একজন তো অন্য জনেরই আরেক কপি। এজন্যই একজন নারীর ভালোলাগা, আনন্দ, দুঃখ, আশা, কল্পনা, স্বপ্ন, ভালোবাসা সবকিছুই নিখুঁতভাবে অনুধাবন করতে পারে অন্য এক নারী।
ঠিক তেমনি এই গল্পগুলোর মাধ্যমে দিকভ্রান্ত কোন বোনকে দেওয়া হয়েছে দিকের নির্দেশ।
অন্ধকারের গহীনে তলিয়ে যাওয়া কোন বোনকে দেওয়া হয়েছে আলোর দিশা। ভুল পথে পা বাড়ানো কোন বোনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এইটা ভুল। হন্যে হয়ে সফলতা খুঁজে বেড়ানো কোন বোনকে দেওয়া হয়েছে প্রকৃত সফলতার ঠিকানা।
♦সর্বোপরি, লেখিকা বোনদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আলোকময় জীবনের ঝাঁপি থেকে একগুচ্ছ বিজয়ের গল্পের পশরা নিয়ে সাজানো হয়েছে এই বই।
এখানে নারীর প্রকৃত বিজয়ের স্বরুপ উম্মোচন করা হয়েছে। প্রকৃত নারীমুক্তির কথকতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ৭টি গল্পের মাধ্যমে। অজ্ঞতা, কপটতা আর কথিত সামাজিকতার ঠুনকো দেয়াল ভেঙে ওপারের সজীব উদ্যানের সন্ধান দেওয়া হয়েছে এই বইয়ে।
প্রত্যেকটা গল্পই আপনার মনে আঁচড় কাটবে। ভুল ধরিয়ে দিবে, আপনি বুঝতে পারবেন কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল! গল্পের দিকহারা বোনদের মত আপনিও পেয়ে যাবেন দিকের নির্দেশ। বিজয়িনী বেশে নিজেকে দেখতে চাইলে আপনিও বইটি পড়তে পারুন।