হক বাতিলের দ্বন্দ্ব চিরন্তন। ইসলাম আবির্ভাবের শুরুলগ্ন থেকেই চলছে বাতিল অপশক্তির দৌরাত্ম্য। সময়ের পরিক্রমায় যুগের পালাবদলে নানারঙা বাতির মতো পরিবর্তন হয় বাতিল শক্তির ষড়যন্ত্রের মুখোশ। হাল যামানায় ইসলামবিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্র অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভয়ঙ্কর। তারা কোন রাখঢাক না করেই প্রকাশ্যে ইসলাম নির্মূলের নীলনকশা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষকে ঈমানহারা করার জন্য নাস্তিকতা ও ইসলামের নামে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দিচ্ছে নানান কৌশলে। বর্তমান আধুনিক পৃথিবীতে ইসলামকে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য মানুষের মগজের কোষে কোষে পৌঁছে দিচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষের বিষবাষ্প। নিজেরা অশান্ত পৃথিবীর অনুঘটক হওয়া সত্ত্বেও সুকৌশলে সেই দোষ উগড়ে দিচ্ছে শান্তির ধর্ম ইসলামের নামে।
ইসলামকে অপাংক্তেয় করতে তাদের দৌড়ঝাঁপ আপাতদৃষ্টিতে গতিশীল মনে হলেও বাস্তবে রঙ্গিন ফানুসের মতো অস্থায়ী। শান্তির চিরস্নিগ্ধ বাতিঘর ইসলামের শাশ্বত সৌন্দর্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিলে নস্যাৎ হবে তাদের ষড়যন্ত্র। নিশ্চিহ্ন হবে কুহেলি ফাঁদ। বক্ষমান ব্যালেন্সিং স্ক্রু বইয়ে ইসলামবিদ্বেষীদের নাস্তিকতা, ইসলামফোবিয়া ও ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে রসমিশ্রিত গল্পে দলিল ও যুক্তির আলোকে। আশাবাদের চঞ্চল উচ্চারণে বলি, বইটি পাঠে সংশয়- সন্দেহের কালোমেঘ দূর হয়ে হৃদয়াকাশে উদিত হবে ঈমানের কড়ামিঠে সূর্য।
ব্যালেন্সিং স্ক্রুর অ্যাডভেঞ্চার পাঠভ্রমণে আপনাকে সুস্বাগতম।
নাফিসা ইয়াসমিন –
প্রাক কথন
—————–
পশ্চিমাদের ‘তথাকথিত সভ্য সমাজের’ সংজ্ঞায়িত ‘আধুনিক ধারায়’ মানুষ নিজেদের সাজাতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছে মনুষ্যত্ব বোধ, নীতি নৈতিকতা এবং তার স্থানে জায়গা করে নিয়েছে অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা।
হাল আমলে ইসলামবিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্র অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভয়ঙ্কর। তারা কোন রাখঢাক না করেই প্রকাশ্যে ইসলাম নির্মূলের নীলনকশা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যকে বিচ্ছিন্ন করতে ইসলামের দুশমনরা কিভাবে সুকৌশলে যুবসমাজকে অবক্ষয়ের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ,কিভাবে বিজ্ঞাপনের নামে অপসংস্কৃতি ও আধুনিকতার নামে অশ্লীলতার প্রসার ঘটিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করছে সে সম্পর্কে ধারণা করতে ও সচেতন করতে লেখক কাজী মাহবুব সাহেবের “ব্যালেন্সিং স্ক্রু” বইটি প্রকাশ করেছে আমাদের সুপরিচিত হাসানাহ পাবলিকেশন যা ইতিমধ্যেই পাঠকমহলে সাড়া ফেলেছে।
সূচিপত্র থেকে এক ঝলক
—————————————-
ব্যালেন্সিং স্ক্রু বইটির বিষয়বস্তু কয়েকটি অধ্যায়ে বিভিন্ন আকর্ষনীয় শিরোনামে ভুমিকা সহ নয়টি গল্পে বিভক্ত।
⚫এ ফাদার সেভড হিজ ডটার’স লাইফ
⚫স্মার্ট সনম
⚫মতাদর্শ
⚫এয়ার কমোডর কুরদুগলু
⚫গাছপালার প্রেম
⚫ব্যালেন্সিং স্ক্রু
⚫হোয়াই ডন্ট ইউ সি দ্যা গড?
⚫এ টাইমলি টেক্সট
⚫আসেনশন
বই-কথন
—————
ব্যালেন্সিং স্ক্রু নামকরণ দেখে প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠকের মনে হতে পারে এটি কোন ‘সায়েন্স ফিকশন’ অর্থাৎ বিজ্ঞান সম্পর্কিত বই।
কিন্তু বইটি পাঠের পর উপলব্ধি হয়, এটি আদতে কোন সায়েন্স ফিকশন কিংবা শুধুমাত্র নাস্তিকদের পর্যাদুস্ত করার কোন রচনাশৈলী নয়। বরং বক্ষমান বইয়ে নাস্তিকতার নামে ইসলাম বিদ্বেষীদের আস্ফালন, ইসলামফোবিয়ার” নামে মুসলিম উম্মাহকে ধুলিসাৎ করে দেওয়ার অপপ্রয়াস এবং ইসলামের শত্রুদের গভীর ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে রসমিশ্রিত গল্পে ও যুক্তির আলোকে।
লেখক সুন্দর রচনাশৈলীতে অসাধারণ কিছু গল্প তুলে ধরেছেন। নাস্তিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে গৎবাঁধা প্রবন্ধ রচনা না করে সেগুলোকে হৃদয়গ্রাহী গল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন যাতে সকলের বোধগম্য হয়।
“জায়ান” নামক একটি কেন্দ্রিয় চরিত্রের মাধ্যমে গল্পে গল্পে ইসলামের বিরুদ্ধে মুশরিকদের চক্রান্ত ,বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান এবং ইসলামবিদ্বেষীদের নানান ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের জাল উন্মোচন করেছেন লেখক।
📚’এ ফাদার সেভড হিজ ডটার’স লাইফ’ নামে একটা কল্পবিজ্ঞানের পরিসরে সুন্দর গল্প উপস্থাপন করা হয়েছে।
লেখক দেখিয়েছেন কিভাবে পশ্চিমারা সুকৌশলে মস্তিষ্ক প্রসূত পরিকল্পনার মাধ্যমে একটা সুশৃঙ্খল সভ্য জাতিকে ধ্বংস করেছে। শান্তিপূর্ণ জাতিকে লিপ্ত করে দিয়েছে পারস্পরিক দ্বন্দ-বিবাদ ও হানাহানিতে।
তার বিনিময়ে তারা নিজেদের পেট ও পকেট ভর্তির মাধ্যমে স্বার্থ হাসিল করেছে।
📚 “স্মার্ট সনম” গল্পে আমাদের তরুণ প্রজন্মের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে যারা যুক্তির আলোকে আল-কুরআন এর সত্যতা পর্যালোচনা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। শুদ্ধ বিজ্ঞান ও কুরআনের মধ্যে আদতে সংঘর্ষ নেই । শত শত বছর ধরে বহু গবেষণা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে বিজ্ঞান আজ যে থিওরিতে এসেছে, সেখানে আল কুরআন তার প্রঙ্গাপন জারি করেছে তার কয়েক হাজার বছর আগে।
বিজ্ঞান শুধুমাত্র কুরআনের আয়াতকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে মাত্র।
📚”মতাদর্শ” নামক গল্পে উঠে এসেছে কিভাবে আধুনিক হওয়ার লক্ষ্যে পাশ্চাত্যের নোংরামি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের মস্তিষ্কে ও মননে। তাদের অশ্লীলতাকে আমরা নাম দিয়েছি ট্যাবু ব্রেকিং।
সেক্স এডুকেশন এর দোহাই দিয়ে কিশোর সমাজে সুকৌশলে নোংরামি ছড়ানো, নারীবাদ, সমকামিতা, লিংগ পরিবর্তন, লিভিং রিলেশনশিপ প্রভৃতিকে আমাদের চোখের সামনে সুশীলভাবে উপস্থাপন করা হয় আধুনিকতার নামে যেগুলো আসলেই একটা পরিবারের কাঠামোকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়ে গোটা সমাজকে অধঃপতনের অতল গহ্বরে তলিয়ে দেয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে মুখোশধারী কিছু অমানুষ তাদের বিকৃত মানসিকতা নিয়ে বিজ্ঞান ও আধুনিকতার তকমা লাগিয়ে সমাজে কীভাবে যৌন উন্মাদনা ও অশ্লীলতার সংক্রামক ব্যাধি এবং দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের এইসব ঘৃণ্য চক্রান্তের মুখোশ উন্মোচনের এক অভিনব প্রয়াস ঘটেছে গল্পে গল্পে।
📚 হোয়াই ডন্ট ইউ সি দ্যা গড? এ টাইমলি টেক্সট, আসেনশন সহ প্রায় প্রতিটা গল্পে ফুটে উঠেছে আল-কুরআনের মাহাত্ম্য এবং বিজ্ঞানের সীমিত পরিসর।
বিজ্ঞান সদা পরিবর্তনশীল, কিন্তু আল-কুরআন চির ভাস্বর।
পাঠ্য অনুভূতি
——————-
বইটি থেকে উপলব্ধি হয় ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্রে কিভাবে আজ মুসলিম উম্মাহ পদে পদে লাঞ্ছিত অত্যাচারিত হচ্ছে।
পশ্চিমাদের শেখানো আধুনিকতা, ব্যাক্তিস্বাধীনতার বিষাক্ত বুলি মুসলিম সমাজে ঘুণ ধরিয়ে দিতে যথেষ্ট।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিনষ্ট করতে তারা সুকৌশলে অশ্লীলতার বীজ বপন করে চলেছে যুবসমাজের মধ্যে।
হাতিয়ার করেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, মিডিয়া, মুভির নামে সভ্য সংস্কৃতির তথ্য প্রযুক্তিকে।
এইসব সামাজিক ব্যাধি কারা,কেন আর কীভাবে ছড়াচ্ছে আর কারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে —এইসব প্রশ্নের উত্তরও লেখক দিয়েছেন গল্পের ভেতরে।
📚প্রিয় উক্তি
——————–
📙ধর্ম আমাদের তা-ই নিষেধ করে যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। আর তারই অনুমোদন দেয় যা আমাদের জন্য কল্যাণকর।
📙 আল্লাহর ক্ষমতা কল্পনা করতে হলে প্রথমে নিজের ক্ষুদ্রতা অনুধাবন করা শিখতে হবে।
📙শুদ্ধ বিজ্ঞান ও কুরআনের মধ্যে আদতে সংঘর্ষ নেই।বিজ্ঞান কুরআনের কথাগুলো সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে মাত্র।
কেন পড়বেন
———————
যেদিকে চোখ পড়ে দেখতে পায় অশ্লীলতা, যৌন উন্মাদনা,ধর্ষণ, হত্যা, লুটপাট, ছিনতাই, অশান্তি, নৈরাজ্য।কখনো ভেবে দেখেছি সমাজের এই কলুষতার পিছনে আসল উদ্দেশ্য কি?কারা কোন স্বার্থ চরিতার্থ করতে সমাজের শৃঙ্খলাকে বিনষ্ট করছে ?
ইসলামের শত্রুরা কিভাবে মুসলিম উম্মাহকে ধুলিসাৎ করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে এইসমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানতে এবং বাতিল পন্থীদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত হতে অবশ্যই বইটা পাঠ করতে হবে।
সন্দেহ সংশয়ের কালো মেঘ দূর হয়ে হৃদয়াকাশে পুনরায় উদিত হবে ঈমানের কড়ামিঠে সূর্য্য।
পাঠক বইটিতে সচেতনতার পাশাপাশি মুগ্ধ হবে আকর্ষণীয় গল্পের বিন্যাস দেখে।
শেষ কথা
————–
বর্তমান প্রজন্মের জন্যে অত্যন্ত জরুরী, একটি নয় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ বহন করে বক্ষমান বইটি।
বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে উঠে আসা আল কুরআন এর সুন্দর ব্যাখ্যাগুলো পুনরায় মনে করিয়ে দেয় আল-কুরআন চির ভাস্বর। বিজ্ঞানের ব্যার্থতা, এই যে বিজ্ঞান তার লিমিটেড ক্ষুদ্র ক্ষমতা নিয়ে এখনো অধিকাংশ আয়াতকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি।
ইসলামকে অপাংক্তেয় করতে ইসলামের শত্রুদের দৌড়ঝাঁপ আপাতদৃষ্টিতে গতিশীল মনে হলেও বাস্তবে তা রঙিন ফানুসের মতোই অস্থায়ী। শান্তির চিরস্নিগ্ধ বাতিঘর ইসলামের শাশ্বত সৌন্দর্য একদিন ছড়িয়ে পড়বে আর নস্যাৎ হবে বাতিলের ষড়যন্ত্র।
🍂
📚এক নজরে বই পরিচিতি
বই: ব্যালেন্সিং স্ক্রু
লেখক: কাজী মাহবুব
প্রকাশনা: হাসানাহ পাবলিকেশন