পার্থিব ধূলিমালিন্যকে নিচে ফেলে উজ্জ্বল শুকতারার মতো জাতিবর্ণের বহু ঊর্ধ্বে মানবিকতার দিকে সকলের অখণ্ড মনোযোগকে আকৃষ্ট করলেন তিনি। বাদলপোকার মতো যে ক্ষণজীবী ভাবনারা সেই লোকগুলোর মানসিকতায় উৎপাতের মতো সমানে ফরফর করছিল, বজ্রের ঝলকানিতে তাদের হাত-পা-ডানাগুলো পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল চিরদিনের মতো। সেই নির্ঘোষ থেমে গেছে। বিচ্ছিন্ন চেতনাগুলো আবার একসাথে একজোট হয়ে অনেক কুলীন সম্ভ্রম চোখে নিয়ে ফিরে এলো সেই জ্যোৎস্নাপ্লাবিত মুখের চারপাশে। সেই প্রশান্ত মিতবাক মুখে তখন হিরার ধ্যানগম্ভীর মৌনতা।
তাঁর চারপাশ ঘিরে নিশীথ বনরাজির বিস্ময়কর নির্জনতা বেজে যাচ্ছিল তখন। সকলে অনুভব করলেন—সেই নিশীথ অরণ্যের বিপুল শীর্ষদেশে অস্পষ্ট ধ্বনিপুঞ্জের ওপর আর এক প্রতিধ্বনি, কী এক মহান বারতার মতো অবিরাম ঝরে পড়ছে। হঠাৎ ঘর আলো হওয়ার মতো সকলে দেখতে পেলেন, এসব কথাবার্তা বর্তমানকে অতিক্রম করে আর এক অনন্ত কিছুর দিকে ঝুঁকে আছে।…
Copyright © 2025 Seanpublication.com
Din Muhammad Sheikh –
• বই : অনন্তের দিকে
• লেখক : আব্দুল আযীয আল আমান
• প্রকাশনী : বইকেন্দ্র পাবলিকেশন
• প্রকাশকাল : অক্টোবর, ২০২০
• পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১২৮
• প্রচ্ছদ মূল্য : ২০৮ টাকা
• কাভার : জ্যাকেটসহ হার্ডকাভার
• ধরণ : সিরাহ
_______________________________
▪️ লেখক নিয়ে দু’ কলম :
আব্দুল আযীয আল আমান। জন্মেছেন কলকাতার চব্বিশ পরগনায়৷ ১৯৩২ সালের ১০ই মার্চে। লেখালেখির সাথে যুক্ত হয়েছেন ছাত্রজীবনেই। তখনই লিখেছেন বিখ্যাত বই ‘পদক্ষেপ’। বিখ্যাত ভ্রমণকাহিনী ‘কাবার পথে’ তাঁরই রচনা। এছাড়াও হাদিসকে পুঞ্জি করে রঙ তুলিতে এঁকেছেন রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুমহান চরিত্রের সুশোভিত ফুলের পাপড়ি — সিরাত-সিরিজ। নজরুল পরবর্তী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি ছিলেন এক অনন্য গদ্যশিল্পী। ১৯৯৪ এর ১লা ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন আব্দুল আযীয আল আমান।
.
▪️ ‘অনন্তের দিকে’ নিয়ে দু’ কথা :
আব্দুল আযীয আল আমানের বিখ্যাত সিরাত-সিরিজের ছয়টি বইয়ের অন্যতম ‘অনন্তের দিকে’। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন হাদিসকে কেন্দ্র করে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারিত্রিক মাধুর্যকে গল্পের আদলে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আমানের সিরাত-সিরিজে। এ বইটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
.
▪️ যেভাবে সাজানো হয়েছে বইটি :
বইয়ের শুরুর দিকেই আছে প্রকাশকের অভিমত, এস. এম. হারুন-উর-রশীদ স্যারের ভূমিকা, ‘জরুরি জ্ঞাতব্য’ শিরোনামে লেখক-তনয় মুনীর বিন আব্দুল আযীযের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। এ পৃষ্ঠাগুলো পড়লে পাঠক জানতে পারবেন আমানের সিরাত-সিরিজের বৈশিষ্ট্য, লেখক-তনয় কেন আবার বইগুলো পুনঃপ্রকাশের চিন্তা করলেন, কতটুকু সম্পাদনা করেছেন। এছাড়াও জানা যাবে আমানের সিরাত-সিরিজ প্রকাশের পথে বইকেন্দ্র কীভাবে এগুলো, আমানের নিজস্ব ভাষারীতির ব্যাপারে প্রকাশনী কোন নীতি অবলম্বন করেছে এবং কেন করেছে। রাসূল-চরিত এবং রাসূল-চরিত হিসেবে আমানের বৈশিষ্ট্য নিয়েও দু-চার কথা পাবেন এ অংশে।
সূচীপত্রের সংযুক্তির পর শুরু হয়েছে বইটির মূল অংশ। মোট ২০টি গল্প স্থান পেয়েছে লেখকের অত্র বইটিতে। গল্পগুলোর উৎস কী, কোন হাদিস অবলম্বনে এগুলো রচনা করা হয়েছে, তা জানতে পাঠককে পড়তে হবে লেখকপুত্র কর্তৃক সংযোজিত ‘পরিশিষ্ট’ অংশটি। এখানে লেখকপুত্র মুনীর বিন আব্দুল আযীয রেফারেন্সসহ হাদিসগুলো উল্লেখ করে দিয়েছেন, যা পাঠককে গল্পগুলোর ব্যাপারে আরো দৃঢ়তা আনবে ইনশাআল্লাহ।
.
▪️ যা যা পাবেন বইটিতে :
বইটি পড়ে আপনি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধুর্যময় চরিত্রের খানিকটা উপলব্ধি করতে পারবেন। বইটি থেকে আপনি জানতে পারবেন মানুষের প্রতি রাসূলের মমত্ববোধ কতটুকু ছিল, প্রতিবেশীর প্রতি রাসূলের দায়িত্ববোধ কেমন ছিল। আরো জানতে পারবেন পাওনাদারের সাথে কীরূপ আচরণ করা উচিত, সন্দেহ পোষণ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি। সবই পাবেন গল্পের আদলে, আকর্ষণীয় ছন্দে।
গল্পের উৎস-হাদিসগুলো অধিকাংশই হয়তো আপনার পরিচিত। তবে এ পরিচিত হাদিসগুলোই পাবেন নতুন স্বাদে, ভিন্ন আঙ্গিকে। দু-একটি গল্প – যেমন:
যাকাত আদায়ে দায়িত্বরত এক সাহাবীর কথা মনে আছে? – যিনি যাকাত সংগ্রহ করে এসে বলেছিলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! এগুলো বায়তুল মালের, আর এগুলো আমার।” সে ঘটনাটি অংকিত হয়েছে ছন্দময় ভাষায় ‘হিতকর মেঘমালার একটি’ শিরোনামের অধীনে। মাসজিদে নববীর ঝাড়ুদার সে মহিলার কথাও এসেছে বইটির ‘একটি নিখিল আত্মীয়তা’ এর শিরোনামে। আদী ইবনে হাতেমের ইসলাম গ্রহণের সেই স্মরণীয় ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে ‘একটি রাজবেশের আত্মসমর্পণ’ শীর্ষক গল্পে।
ঠিক এভাবে নবীজীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে অত্র বইটির গল্পগুলো। পাঠক পড়বেন, আপ্লুত হবেন, হারিয়ে যাবেন দেড় হাজার বছর পূর্বের দিনগুলোতে।
.
▪️ প্রশংসনীয় দিক:
অসাধারণ একটি বই। এক সম্মোহনীশক্তি রয়েছে গল্পগুলোতে, যা একজন পাঠককে চুম্বকের মতো ধরে রাখবে বইয়ের শেষাংশ পর্যন্ত। সবগুলো গল্পই হাদিসের। হাদিসের আলোকের রচিত হয়েছে গল্পগুলো। বইয়ের শেষের দিকে সংযুক্ত রেফারেন্স গল্পগুলোর ব্যাপারে আপনার মনে আরো দৃঢ়তা দিবে। বইটির আকর্ষণীয় শব্দ-বুনন, আলঙ্কারিক বাক্যের ব্যবহার আপনাকে অবাক করে ছাড়বে ইনশাআল্লাহ। এছাড়াও আকষ্মিক সূচনা, অসমাপ্ত উপসংহার বইটিকে করেছে বেশ আকর্ষণীয় – একটি সার্থক ছোটগল্প হতে গেলে এ বিষয়টি খুব দরকারও বটে। উপমার যথার্থ প্রয়োগ, ছন্দময়-আবেগীয় ভাষার উপস্থাপনা বইটিকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। তাছাড়া পোক্ত বাইন্ডিং, চলনসই প্রচ্ছদও প্রশংসার দাবিদার।
.
▪️ বইটি কেন পড়বেন :
আমানের সিরাত-সিরিজ গতানুগতিক সিরাতগ্রন্থের মতো নয়। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন হাদিস কেন্দ্র করে রাসূলের সুমহান চরিত্র অংকিত হয়েছে গল্পের আদলে। তাই যারা ব্যস্ত পাঠক, তাদের জন্য খুব স্বল্প সময়েই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে খণ্ড খণ্ড ধারণা নেওয়া সম্ভব। এ সিরাত-সিরিজ নিঃসন্দেহে উচ্চমার্গীয় সাহিত্য। তাই সাহিত্যবোদ্ধাদের জন্য এ এক অনন্য উপহার। সাহিত্যজ্ঞান বাড়াতে, রাসূল-চরিত্রের ফুটন্ত ফুলের সুবাস নিতে আমানের সিরাত-সিরিজের বইগুলো আপনার পড়া দরকার।
আব্দুল আযীয আল আমানের সিরাত-সিরিজের সর্বোচ্চ প্রচার কামনা করছি।