সীরাতের গ্রহণযোগ্য কিতাবসমূহ থেকে চয়িত, ঝরঝরে সাবলীল ভাষায় লিখিত, রাসূল সা. এর জীবনীবিষয়ক গ্রন্থ “মহানবী সা.”। সহজ সরল চিত্তাকর্ষক ভঙ্গিতে গল্পের ভাষায় রচিত নবীজীবনের কাহিনী নিয়ে অসাধারণ এক সীরাতগ্রন্থ।
বইটি পড়তে গিয়ে পাঠক কোথাও বিরক্তবোধ করবেন না। নিজের অজান্তেই হারিয়ে যাবেন সীরাতের অজানা ভুবনে, স্নাত হবেন নবীপ্রেমে। মনে হবে, নতুন করে জানছেন প্রিয় নবীকে…!
আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ, স্পেশাল মজবুত বাঁধাই এবং ক্রিম কালার অফসেট কাগজে ছাপা বইটি দেখেই নয়ন জুড়িয়ে যাবে। গেটাপ দেখেই ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে সাজিয়ে রাখতে ইচ্ছে করবে। তো আর দেরি কেন?
Copyright © 2024 Seanpublication.com
Mahbubul Islam Borshon –
চিরদুঃখী তিনি। বাবা-মা-দাদাকে হারিয়েছেন শৈশবে। প্রিয় চাচা ও প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়েছেন একই সাথে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে। তারপর একে একে হারিয়েছেন ছয়টি সন্তান। বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হয়ে হারিয়েছেন প্রিয় সঙ্গী-সাথী। কত ব্যথা, কত দুঃখ ছিলো তাঁর জীবনের প্রতিটি বাঁক জুড়ে। তারপরও ধৈর্য হারাননি। মুখ গোমড়া করে রাখেননি। সকল দুঃখ মনের গভীরে চাপা দিয়ে স্মিতহাস্যে মুখ উজ্জ্বল করে সংসার-সমাজ-রাষ্ট্র সামলেছেন একসাথে।
কে তিনি?
আমার নবী
মহানবী
রহমাতুল লিল আলামীন
কোন মুসলমানের জন্য নিজেকে জানা ততোটা আবশ্যকীয় নয়, যতোটা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জানা আবশ্যক।
“মু’মিনদের নিকট নবী তাদের আপন সত্তা অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর।”(সূরা আহযাবঃ৬)
আজ আমরা সবাইকে চিনি, নবীকে চিনি না। দুনিয়ার নায়ক-নায়িকা,ক্রিকেটার,সাহিত্যিক এদের সম্পর্কে যে পরিমান জানি তার কিয়দাংশও কি আমার নবী সম্পর্কে জানি?
যারা আগে কখনো কোন সীরাত গ্রন্থ পড়েননি, তারা চমৎকার এই বইটি দিয়ে শুরু করতে পারেন। এই বইটির যে বিষয়টা বেশ ভালো লেগেছে তা হচ্ছে এর ভারসাম্যতা! লেখিকা একদিকে যেমন গতানুগতিক রসহীন শুষ্ক ইতিহাসের বইয়ের ভাষায় লিখেননি, তেমনি পুরোপুরি গল্পভাষ্যে লিখতে গিয়ে আবেগের বাড়াবাড়িও করেননি। বেশি গভীরে যেমন যান নি তেমনি একদম সংক্ষিপ্তও করেন নি। সুখপাঠ্য ভাষায় নবীজির পুরো জীবনটাকে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছেন।
বেশ মুগ্ধতা নিয়েই বইটি শেষ করেছি। বইটি আরেকটি কারণে আমার কাছে স্পেশাল হয়ে থাকবে। আলহামদুলিল্লাহ অনেকগুলো সীরাতগ্রন্থ পড়ার সৌভাগ্য হলেও এটিই আমার পড়া প্রথম সীরাতগ্রন্থ যার লেখক একজন নারী।
আল্লাহ তাআলা লেখিকা কে উত্তম প্রতিদান দিক আমার নবী কে নিয়ে এমন চমৎকার একটি বই লেখার জন্য।
আব্দুর রহমান –
আমরা সচরাচর রাসূল (স:) এর যেসব জীবনী পড়ি তাতে থরে থরে সাজানো থাকে তথ্যের স্তুপ আবার কোন কোন জীবনীতে সাহিত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে অতি বাড়াবাড়ি করা হয়। আবার যেসব জীবনীতে বেশি পরিমানে তথ্য থাকে তাতে ঘটনাগুলোর বিশ্লেষণ করা থাকেনা।কিন্তু “মহানবী” গ্রন্থটি লেখিকা এ দুইয়ের মাঝামাঝি থেকে লিখেছেন। এই কিতাবের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো এখানে লেখিকা নবীজির জীবনীকে তথ্যের স্তুপ না বানিয়ে সাহিত্যিক ভাবধারা অক্ষুণ্ণ রেখে ঘটনা গুলো বিশ্লেষণ করেছেন।
,
▶সার-সংক্ষেপ:-
“মহানবী” বইটিকে লেখিকা ৫২ ছোট ছোট পর্বে ভাগ করে আলোচনা করেছেন। যথা-
🔸বইয়ের প্রথম শিরোনাম ‘ইতিহাসের ইতিহাস’। এখানে বর্ণিত হয়েছে ইবরাহিম (আ:) কর্তৃক বিবি হাজেরা ও শিশুপুত্র ইসমাইলকে জনমানবহীন মরুভূমিতে রেখে যাওয়া, পানির খোঁজে হাজেরার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে ঘুরে বেড়ানো, শিশুপুত্র ইসমাইল এর পায়ের আঘাতে জমজম কুপ সৃষ্টি হওয়া এবং রাসূল (স:) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব কর্তৃক হারিয়ে যাওয়া সেই জমজম পানির কূপ পুনরুদ্ধারের কথা আলোচনা করা হয়েছে।
🔸বইয়ের দ্বিতীয় শিরোনাম ‘জীবন মৃত্যুর খেলাঘরে’ । এ অধ্যায়ে ইবরাহিম (আ:) কতৃক শিশুপুত্র ইসমাইলকে কুরবানির ঘটনা ও আমেনার সাথে আব্দুল্লাহের শুভ বিবাহ, বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে পরশ্রীকাতর সেই ইহুদি-কন্যার সাথে সাক্ষাতের কথা আলোচনা করা হয়েছে।
🔸তৃতীয় শিরোনাম ‘পৃথিবীজুড়ে অন্ধকার’ শিরোনামে এ অধ্যায়ে ইয়ামানের গভর্নর আবরাহার বিশাল হস্তিবাহিনী নিয়ে বায়তুল্লায় আক্রমণ, আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট্ট পাখির কংকর নিক্ষেপের মাধ্যমে হস্তিবাহিনী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
🔸বইয়ের চতুর্থ শিরোনাম ‘আমেনার আলোশিশু’। এখানে রাসূল (স:) এর জন্মের সময়কার বর্ণনা দেয়া হয়। শুরু হয় সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মহামানবের দুনিয়ার জীবনের অগ্রযাত্রা।
🔸এভাবে বইতে ৫২ টি শিরোনামের মাধ্যমে রাসূল (স:) এর পুরো জীবনকাহিনী তুলে ধরা হয়। প্রতিটি শিরোনামের নামকরণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় শব্দ দ্বারা। যেন সেই শিরোনাম দেখলেই পুরো লেখা পড়তে ইচ্ছা করে।
.
▶ব্যক্তিগত অনূভুতি:-
ব্যক্তিগত অনূভুতি যদি বলতে হয় তাহলে বলবো বইটি এককথায় অসাধারন। বইয়ের প্রতিটি পাতায় রয়েছে লেখকগণের কঠোর পরিশ্রমের ছোয়া। সঠিক শব্দচয়ন, মজবুত ও পাকাপোক্ত শব্দের গাঁথুনি বইটিকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। বইয়ের প্রতিটি বাক্যই যে অভূতপূর্ব ভালোলাগায় সম্মোহিত করে রাখবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। বইটি পড়তে গিয়ে পাঠক কোথাও বিরক্তবোধ করবেন না। নিজের অজান্তেই হারিয়ে যাবেন সীরাতের অজানা ভুবনে। মনে হবে, নতুন করে জানছেন রাসূল (স:) কে।